ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের বছরে নেতৃত্বে ঢাবি

২০২৪ ডিসেম্বর ৩১ ১৩:২২:৫৫
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের বছরে নেতৃত্বে ঢাবি

ঢাবি প্রতিনিধি: রাজনীতি ও ক্ষমতার পটপরিবর্তনের বছর ২০২৪। ছাত্রদলের আন্দোলনে সবচেয়ে বড় বিজয় এসেছে এই বছরে। যেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের হাত ধরে এসেছে 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা'।

এছাড়াও যৌন নীপীড়ন, শিক্ষকদের পেনশন, শিক্ষার্থীদের কোটা, ও সবশেষ স্বৈরাচার পতনের অংশ হিসাবে বলিষ্ঠ ভুমিকায় ছিল ঢাবি। একই সাথে নতুন রাজনৈতিক কাঠমোয় প্রবেশ করেছে রাজনীতির আঁতুড়ঘর খ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বলা চলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁক ঘুরিয়ে দিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়৷

চলতি বছরের জুন মাসে হাইকোর্টের একটি রিটের ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে আসে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। পরে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নিজ ক্যাম্পাসে আন্দোলন গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও ছাত্রদের গুলি করে হত্যার কারণে আন্দোলনটি কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।

পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তার দলীয় সঙ্গীদের অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এভাবেই সাধারণ একটি ছাত্র আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। চড়াই-উতরাই শেষে ছাত্রদের হাত ধরেই আসে জনতার বিজয়। এ বিজয়ে সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষকদের আন্দোলন ২৬ শে মে প্রথমবারের মতো তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের প্রবর্তিত প্রত্যয় স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আপত্তি দেখা দেয় এ নিয়ে তারা মানববন্ধন আয়োজন করেন। যা জুলাই অবধি জারি ছিলো। জুলাই মাসে শিক্ষক সমিতির আহ্বানে ও নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকে। শেষদিকে শিক্ষকদের আওয়ামীলীগ নিয়ন্ত্রিত অংশ গনবিরোধী অবস্থান নিলেও, বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ও শিক্ষক নেটওয়ার্কের শিক্ষকবৃন্দ আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী এবং গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন: ইতিহাসের নতুন মোড় গত ৫ জুন প্রথমবারের মতো কোটা পুনর্বহালের কারণে শিক্ষার্থীদেরকে ক্ষোভে ফুঁসে উঠতে দেখা যায়। পরপর কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং বিশাল মিছিল থাকলেও তা পূর্ণতা পেতে শুরু করে জুলাই মাসের ১ তারিখ হতে। বাংলা ব্লকেড ও নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন বেগবান হয়।

এরই মাঝে শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদেরকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করলে ১৪ জুলাই রাতে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করলে আন্দোলন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। পরদিন অর্থাৎ ১৬ জুলাই ঢাবির ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে আন্দোলন শুরু হলে পুলিশের গুলি ও হামলায় ৬ জন নিহত হন। এদিকে ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এতে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১৭ তারিখ সকাল হতে প্রত্যেকটি হলে ছাত্রলীগকে পিটিয়ে বের করে দেয়। ভাঙচুর চলে তাদের দখলকৃত প্রতিটি রুমে। পাওয়া যায় আপত্তিকর জিনিসপত্র এবং বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ দেশীয় অস্ত্র। অতঃপর শিক্ষার্থীদের চলতে থাকা আন্দোলন হস্তক্ষেপ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ১৭ তারিখ সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে হল থেকে এক প্রকার বিতাড়িত করে তারা। পুরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ফাঁকা হয়ে গেলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি শহরে মফস্বলে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ৭ আগস্ট থেকে হলে ফিরতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বুঝে নেন নিজেদের জিনিসপত্র। সূচনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন এক পরিবেশের।

পরবর্তীতে ছোটখাটো আন্দোলন চলতে থাকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক এবং কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীদেরকে নিজেদের বিভাগে ক্লাস এবং অফিস কক্ষে অফিস করতে বাধা দেন বিপ্লবী শিক্ষার্থীরা। ফলে অনেক শিক্ষক নিজেদের কার্যক্রম করতে বাধাগ্রস্ত হন। ছাত্রলীগের হামলার সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা বাধা পান নিজেদের ক্লাস পরীক্ষায় বসতে। গণহত্যার পক্ষে থাকায় তাদের সাথে এমনটা করা হয়েছে বলে সে সময় শিক্ষার্থীরা জানান। এর মাঝে আসে নতুন প্রশাসন। পদত্যাগ করেন ঢাবির পুরনো আওয়ামীপন্থী প্রশাসন।

উল্লেখযোগ্যভাবে এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে হওয়া ভার সৃষ্ট বন্যার ত্রাণ সংগ্রহের প্রধান কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। এখান থেকে সারাদেশে ত্রাণ সরবরাহ করা হয় সমন্বয়কদের নেতৃত্বে। সেখানেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায়। একই সাথে কথা চলতে থাকে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের।

প্রকাশ্যে শিবির: নতুন রাজনৈতিক চিন্তারাজনীতি নিয়ে আলোচনায় হঠাৎ করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে আসেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেক কায়েম। এর একদিন পরেই আত্মপ্রকাশ করেন ঢাবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ। ১১ বছর পর আত্নপ্রকাশ করায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিস্ময় উৎসাহ নতুন রাজনীতির প্রতি আগ্রহ যেমন দেখা গেছে তেমনি আতঙ্ক এবং সমালোচনাও করতে দেখা গেছে বেশ। প্রথমদিকে ছাত্রশিবিরের সাথে ছাত্রদলের খুব বেশি মনোমালিন্য কিংবা আদর্শিক দূরত্বগত বিতর্ক না হলেও ক্রমেই প্রকাশ্যে আসতে থাকে তাদের দ্বন্দ্ব। যদিও তা ছিল কেবলই অনলাইনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদল যুগপৎভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। চলতে থাকে তর্ক-বিতর্ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিদিনই হতে থাকে সভা সেমিনার, পাবলিক লেকচার, পলিসি ডায়লগ ইত্যাদি। সেখানে ছাত্রশিবিরকে বেকায়দায় যেমন পড়তে দেখা গেছে তেমনি শক্ত অবস্থান নিতেও দেখা গেছে। একই অবস্থা দেখা গেছে ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রদলের ক্ষেত্রেও। শিক্ষার্থীদের মাঝেও মানসিক বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে তবে আশাব্যাঞ্জক দিক হলো গঠনমূলক সমালোচনার সুযোগ থেকেছে সব সময়। সংঘর্ষে রূপ নেয়নি কোন ঘটনাই।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভারতের আধিপত্যমূলক অবস্থানের তীব্র প্রতিবাদ দৃশ্যমান হয়েছে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল থেকেও ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সবশেষ মিছিল সংঘটিত হতে দেখা গেছে।

ছাত্রদল বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষার কাজে প্রতিযোগীতামুলক অবস্থান ধরে রাখায় রাজনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা৷ শিক্ষার্থীরা চান নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তো। সুস্থ স্বাভাবিক ক্যাম্পাস চাওয়া সকলের।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

বিশ্ববিদ্যালয় এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ববিদ্যালয় - এর সব খবর



রে