ঢাকা, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

কাশ্মীরীদের ওপর চলছে অত্যাচার; বিচারের খোঁজে বাসিন্দারা

২০২৫ এপ্রিল ২৮ ১৭:১৮:২৭
কাশ্মীরীদের ওপর চলছে অত্যাচার; বিচারের খোঁজে বাসিন্দারা

ডুয়া ডেস্ক: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর নেমে এসেছে খড়গহস্ত। হামলায় সন্দেহভাজনদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে সরকার। এ নিয়ে প্রশাসনকে সতর্ক করছে কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলো। প্রায় সবাই বলেছেন, এমন কিছু করা ঠিক নয়, যা মানুষকে নতুনভাবে বিচ্ছিন্ন করে তোলে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

উপত্যকার রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, ‘জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই জারি রাখতে হবে, কিন্তু ভুল পদক্ষেপ ঠিক নয়। তাতে হিতে বিপরীত হবে।’

পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর নৃশংস আক্রমণে ২৬ জনের মৃত্যুর পর জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন উপত্যকা জুড়ে জঙ্গি সন্ধানে অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের ডজনখানেক ঘরবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি ভাঙার কাজে বুলডোজার ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কিছু জায়গায় নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ভেঙে দেওয়া বাড়িগুলোর ছবি এখন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

২২ এপ্রিল পহেলগাঁও-কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে যাদের স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছিল, তাদের পরিবারের ঘরবাড়িও ভাঙা হয়েছে। এছাড়া সন্দেহভাজন উগ্রপন্থিদের বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, যেমন কুপওয়ারা জেলার কালারুস এলাকার ফারুক আহমেদ টেডওয়ার বাড়ি। পুলিশ জানিয়েছে, ফারুক আহমেদ ১৯৯০ সাল থেকেই নিখোঁজ, এবং অভিযোগ রয়েছে, পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত শনিবার ফারুকের বাড়ি ধূলিসাৎ করার পর সেই পরিবারের একজন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “পরিবার ছেড়ে ফারুক সেই কবে থেকে নিরুদ্দেশ। কোথায় গেছে, কেমন আছে কিছুই জানা নেই। আমাদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হলো। আমাদের অপরাধ কী? কোথায় যাব আমরা?”

এই প্রশ্নেই তোলপাড় উপত্যকা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা খুঁজছেন এর উত্তর। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ গণমাধ্যমে এ প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর অবশ্যই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক লড়াই চালাতে হবে। মূলে আঘাত করতে হবে। কিন্তু তা করতে গিয়ে যেন ভুল পদক্ষেপ না হয়।”

তিনি আরও বলেন, “মনে রাখতে হবে, নিরীহ নিরপরাধ মানুষদের হত্যার প্রতিবাদে উপত্যকার সব মানুষ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রাস্তায় নেমেছে। প্রতিবাদী হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। সেই আচরণ স্বতঃস্ফূর্ত। এই সমর্থনকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। দেখতে হবে কোনো ভুল পদক্ষেপ যেন না করা হয়। নিরপরাধ কাশ্মীরিদের যেন ক্ষতিগ্রস্ত হতে না হয়।”

জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচিত সরকার থাকলেও, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রয়েছে। নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রস্তুতি এবং বৈঠকও মুখ্যমন্ত্রীকে বাইরে রেখেই করা হয়।

পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে এবং জঙ্গিদের ধরতে ইতিমধ্যেই পাঁচশ' এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। ১৫০০ এর অধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি, সন্দেহভাজন পলাতক সন্ত্রাসীদের পারিবারিক আস্তানা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।

পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতিও প্রশাসনের বুলডোজার নীতির সমালোচনা করেছেন। মেহবুবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ মারফত জানিয়েছেন, “সরকারের উচিত সাবধান পদক্ষেপ নেওয়া। সন্ত্রাসবাদী ও শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের মধ্যে ফারাকটা বুঝতে হবে। এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা নিরপরাধ মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। যারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, তারা যেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চলে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি আরও বলেছেন, “সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, প্রশাসনকে যেন সতর্ক করে দেওয়া হয়। সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হলে জঙ্গিদেরই লাভ।”

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে