ঢাকা, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বড় পরিবর্তন

২০২৫ এপ্রিল ২৮ ১০:৫৩:১৬
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বড় পরিবর্তন

লিটন ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটে গৃহীত হওয়া ‘চূড়ান্ত সংশোধনী প্রস্তাব’-এ ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা, কার্যক্রমের পরিধি এবং নেতৃত্ব কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নতুন গঠনতন্ত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ধারা ১ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নাম অপরিবর্তিত রাখা হলেও কিছু বিষয় স্পষ্ট করে সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে। তা হলো, পূর্ণকালীন, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তিকৃত, আবাসিক হলের সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীরাই ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। এছাড়াও ভোটারের সর্বোচ্চ বয়স হবে ৩০ বছর। পাশাপাশি সন্ধ্যাকালীন কোর্স, পেশাগত কোর্স, ভাষা কোর্স পিএইচডি পড়ুয়া ও অধিভুক্ত ( পূর্বে ছিলো) কলেজের শিক্ষার্থীরা ভোটার হতে পারবেন না।

গঠনতন্ত্রের ধারা ২ এ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের ব্যাপারে পূর্বে শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যবোধ লালনের কথা উল্লেখ ছিলো। কিন্তু বর্তমান গঠনতন্ত্রে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ধারা ৩ এ সংসদের কার্যাবলীর ক্ষেত্রে পূর্বে কমনরুম, পত্রিকা প্রকাশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং খেলাধুলা আয়োজন এসবই ছিল ছিল মূল কার্যাবলি। কিন্তু বর্তমান সংশোধনীতে এগুলোর পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি, সামাজিক সেবা কার্যক্রম জোরদার, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় সক্রিয় অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গঠনতন্ত্রের ধারা ৪ এ সদস্যপদ, ভোটার এবং প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার ক্ষেত্রে পূর্বে প্রথম অনুচ্ছেদে বর্ণিত মানদণ্ড অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র ডাকসুর সদস্য ও ভোটার হতে পারতেন। কিন্তু সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেবল প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রী, পূর্ণকালীন অধ্যয়ন এবং যাদের বয়স ৩০ বছরের নিচে তারাই ছাত্রসংসদের সদস্য ও ভোটার হতে পারবেন।

গঠনতন্ত্রের ধারা ৫ এ পূর্বে ডাকসুর সকল সভায় সভাপতিত্ব করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অর্থাৎ ডাকসুর সভাপতি। কিন্তু নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ভিসি শুধু কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তবে ডাকসু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করবেন তিনি। জরুরী ভিত্তিতে ডাকসুকে গঠনতন্ত্রের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন ডাকসু সভাপতি।

ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে ভিপি সকল সভায় সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়া জিএস ও এজিএস এর কার্যক্রম আগের মতই রাখা হয়েছে। কিছু কিছু পদের নামে আনা হয়েছে পরিবর্তন যেমন, 'কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক' এখন 'কমনরুম, পাঠকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক', সাহিত্য সম্পাদক থেকে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক থেকে গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদককে করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক।

এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদকের পূর্বে দায়িত্ব ছিলো ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, শেখ মুজিবুর রহমান ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম, সেমিনার আয়োজন করা। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে এটি পরিবর্তন হয়ে ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা যুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত বিষয়াবলী বাদ দেওয়া হয়েছে।

গঠনতন্ত্রের ধারা ৬ এ পূর্বে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকদের মধ্যে হতে এককভাবে কোষাধ্যক্ষ মনোনয়ন করতেন। বর্তমান সংশোধনীতে নির্বাহী কমিটির পরামর্শে কোষাধ্যক্ষ মনোনয়নের বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা হয়েছে। ধারা ৮ এ পূর্বে নির্বাচন সংক্রান্ত আপত্তির ক্ষেত্রে সভাপতির সিদ্ধান্ত ছিল চূড়ান্ত। এ বিষয়ে আদালতে কোন মামলা করা যেতো না। কিন্তু বর্তমানে এটি পরিবর্তন করে সভাপতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও, আদালতের দ্বার উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

গঠনতন্ত্রের দ্বিতীয় অংশে হল সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে পূর্বে নির্বাচনের যোগ্যতা তুলনামূলক শিথিল ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটিকে ডাকসুর অনুরুপ নিয়মে করা হয়েছে। যেমন প্রথম বর্ষে ভর্তি, পূর্ণকালীন অধ্যয়ন ও ৩০ বছরের কম হতে হবে। হল সংসদেও সন্ধ্যাকালীন, পেশাগত ও ভাষা শিক্ষা কোর্সের শিক্ষার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ ৬৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বিদ্যমান বিধান ছিল নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে সভাপতির কাছে আপত্তি জানানো যাবে এবং সভাপতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। আদালতে এর বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাবে না। সংশোধিত বিধানে ‘আদালতে মামলা করা যাবে না’ এই কথাটি বাদ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সভাপতির যে কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থীরা আদালতে মামলা করতে পারবেন তবে সেটি ফলাফল প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে করতে হবে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

বিশ্ববিদ্যালয় এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ববিদ্যালয় - এর সব খবর



রে