ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

৮ মাসে ২৬ রাজনৈতিক দলের উত্থান

২০২৫ এপ্রিল ২৫ ১৩:০৮:০২
৮ মাসে ২৬ রাজনৈতিক দলের উত্থান

ডুয়া ডেস্ক:গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের অধীনে আট মাস পার হতে না হতেই দেশের রাজনীতিতে দেখা গেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রবণতা—নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িক।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আট মাসে অন্তত ২৬টি নতুন রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করেছে। নামগুলো শুনলে চোখ কপালে উঠবে: নিউক্লিয়াস পার্টি, জনপ্রিয় পার্টি, জাগ্রত পার্টি, আমজনতার দল, আ-আম জনতা পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১—এ রকম আরও অনেক।

রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িক কেন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রবণতা বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। অতীতেও নির্বাচনের আগমুহূর্তে ‘ব্যাঙের ছাতার মতো’ অনেক দল গজিয়ে উঠতে দেখা গেছে। এটি একদিকে গণতান্ত্রিক চর্চা বললেও, অন্যদিকে অনেক সময় তা হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণের মাধ্যম

বিশেষ করে নির্বাচনের সময় জোট-রাজনীতির সুবিধা পেতে অনেকেই নতুন দল গঠনের পথে হাঁটেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক সাব্বির আহমেদ বলেন,

"রাজনীতি এখন অনেকের কাছে দ্রুত অর্থ-সম্পদ ও প্রভাব অর্জনের পথ। আদর্শ নয়, বরং রাজনীতির পেছনে এখন জড়িত রাজনৈতিক অর্থনীতি।"

কারা এই দল করছে?

এই দলে যেমন আছে আন্দোলন থেকে আসা ছাত্রদের দল এনসিপি (নিউক্লিয়াস পার্টি)তেমনি আছেন আলোচিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিকুল আমীন।

ডেসটিনির আলোচিত এই সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ১২ বছরের কারাভোগের পর কারাগার থেকে বের হয়ে গড়েছেন বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি)। তিনি সরাসরি দাবি করেন,

"রাজনৈতিক লেবেল না থাকলে এই দেশে মুক্তিও পাওয়া যায় না।"

মাসে গড়ে ৩টি করে দল

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে গড়ে প্রতি মাসে তিনটি করে রাজনৈতিক দল বা প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করেছে।

  • গত বছর গঠিত হয়েছে ১১টি দল

  • ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসেই গঠিত হয়েছে আরও ১১টি

সব মিলিয়ে গত আট মাসে গঠিত দল ও প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬টি

তালিকায় আছে—জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, সমতা পার্টি, সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ইত্যাদি।

‘এগুলা দল আমরা ভ্যানগাড়িয়ালাও বানাইতে পারি’

তবে এসব দল কতটা পরিচিত বা প্রাসঙ্গিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ।

ঢাকার রাস্তায় ভ্যানচালক মো. হারুন বলেন,

“বাংলাদেশে ১০ জন মানুষ মিললে একটা দল বানানো যায়। চাইলে আমরাও বানাতে পারি।”

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে চাকরিজীবী বা চা বিক্রেতা—অনেকেই বলছেন, এসব দলের নাম তারা শোনেননি।

অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করিয়ে দেন, এরশাদের শাসনামলেও হঠাৎ হঠাৎ শতাধিক দলের উত্থান ঘটেছিল।

"তখন বড় দলগুলো নির্বাচন বর্জন করছিল। তাই এরশাদ দেখাতে চেয়েছিলেন, দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে।"

এক পর্যায়ে তখন ৯০টির মতো দল মিলে জোট করেছিল, যদিও বাস্তবে তারা ছিল শুধু সংখ্যার অংশ

টিকে থাকবে কয়টি?

যদিও এখন একের পর এক দলের জন্ম হচ্ছে, ইতিহাস বলছে—তাদের মধ্যে অল্প কয়েকটিই দিনশেষে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে

নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ, রাজনৈতিক ফায়দা ও ব্যক্তিগত এজেন্ডার ঘূর্ণিপাকে জন্ম নেওয়া দলগুলো আসলে গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি, নাকি একেকটি নতুন স্বার্থগোষ্ঠীর মুখপাত্র—সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে