ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ; আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় যে নাম

২০২৫ এপ্রিল ২০ ১০:৪৭:৩৪
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ; আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় যে নাম

ডুয়া ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু নীতির প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই একযোগে এই বিক্ষোভ হয়েছে, যেখানে মানুষ রাস্তায় নেমে এসে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

প্রতিবাদকারীরা এই আন্দোলনকে আখ্যা দিয়েছেন “স্বাধীনতার জন্য নতুন সংগ্রাম” হিসেবে। এদিকে, জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ক্রমেই নিচের দিকে নামছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রোববার (২০ এপ্রিল) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই একযোগে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন হাজারো মানুষ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নীতির প্রতিবাদে এই বৃহত্তর আন্দোলনের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিটির নাম ছিল “৫০৫০১”— অর্থাৎ ৫০টি রাজ্যে ৫০টি প্রতিবাদ কর্মসূচি, কিন্তু লক্ষ্য একটাই: প্রতিবাদ।

এই কর্মসূচি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর ২৫০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলিয়ে আয়োজন করা হয়। তাই অনেক প্রতিবাদকারী বিক্ষোভের সময় “নো কিংস” (No Kings) লেখা পোস্টার হাতে রেখেছিলেন, যেটি ইংরেজ রাজতন্ত্রবিরোধী আমেরিকান বিপ্লবের প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সেদিনের বিক্ষোভে মূলত দুইটি ইস্যু ছিল কেন্দ্রবিন্দুতে—অভিবাসন নীতি এবং সরকারি ব্যয়ের কাটছাঁট। বিক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে হোয়াইট হাউসের সামনেসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বহু শহরের কেন্দ্রস্থলে। এমনকি কিছু টেসলা শোরুমের সামনেও প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

বিভিন্ন দাবির মধ্যে সবচেয়ে জোরালোভাবে উঠে আসে কিলমার আবরেগো গার্সিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান। আন্দোলনকারীরা এই দাবিকে অভিবাসন নীতির প্রতীকী ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেন।

গার্সিয়া মূলত একজন মার্কিন অভিবাসী, যাকে ভুলক্রমে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তার সমর্থনে এদিনের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন গিহাদ এলজেন্দি নামে এক বিক্ষোভকারী। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে তিনি বলেন, “ট্রাম্প চাইলে এল সালভাদরের ওপর চাপ দিয়ে গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন।”

প্রতিবাদকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের একটি উদ্যোগ, "ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই)", নিয়েও আপত্তি তুলেছেন। এই সংস্থাটি সরকারি ব্যয় ও কর্মসংস্থান কমানোর লক্ষ্যে গঠিত হলেও, অনেকেই এটিকে গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন।

এদিকে, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ ছিল, তবে কিছু এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একটি ঘটনায় ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান সুহাস সুব্রামানিয়াম এক ট্রাম্প-সমর্থকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

“স্বাধীনতার চেতনা” আবারও জেগে উঠছে বলে মন্তব্য করছেন বিক্ষোভকারীরা। ম্যাসাচুসেটসের লেক্সিংটন ও কনকর্ড যুদ্ধের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে ৫০৫০১ বিক্ষোভের ঢেউ। সেখানে টমাস ব্যাসফোর্ড নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, “এটি আমাদের স্বাধীনতার জন্য আরেকটা কঠিন সময়। আমি আমার নাতিদের শেখাতে চেয়েছি—এই দেশ কিভাবে গড়ে উঠেছিল এবং কখনও কখনও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতেই হয়।”

এদিকে সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে কমছে। গ্যালাপের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে তার জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে ৪৫ শতাংশে, যেখানে গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার সময় এই হার ছিল ৪৭ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে, ১৯৫২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যেকোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম কোয়ার্টারে গড় জনপ্রিয়তা ছিল ৬০ শতাংশ।

অর্থনীতি নিয়েও আমেরিকান জনগণের অসন্তোষ বাড়ছে। রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৭ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিতে সন্তুষ্ট, যেখানে জানুয়ারিতে এ হার ছিল ৪২ শতাংশ।

তবে, শনিবারের বিক্ষোভকে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বলা হচ্ছে না। এর আগে এপ্রিলের শুরুতে “হ্যান্ডস অফ” শিরোনামে একটি আরও ব্যাপক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ১২০০টি স্থানে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেটিকেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে