ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল

পণ্য পরিবহনে আকাশপথের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চাচ্ছে বাংলাদেশ

২০২৫ এপ্রিল ১৯ ১৮:১১:১৬
পণ্য পরিবহনে আকাশপথের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চাচ্ছে বাংলাদেশ

ডুয়া ডেস্ক: ভারত বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আকাশপথে রপ্তানি কার্যক্রম জোরদার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নির্ধারিত কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জনবল বাড়িয়ে কার্গো সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা জোরদার করা হয়েছে।

ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের পণ্য ভারতে ট্রানজিট দিয়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে পাঠানোর অনুমতি বাতিল করে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া জানান, “শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করে কার্গো প্রসেসিং জোরদার করা হবে।” তিনি বলেন, “সিলেট বিমানবন্দর ২৭ এপ্রিল থেকে কার্গো কার্যক্রম শুরু করবে এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেও শিগগির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া কার্গো ফ্লাইট বাড়াতে টার্কিশ এয়ারলাইন্সসহ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।”

সিলেট বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমেদ জানান, “ভয়েজার এয়ারলাইন্স মধ্যপ্রাচ্যের মাধ্যমে স্পেনে প্রথম কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করবে, যেখানে প্রায় ৬০ টন পোশাক পরিবহন করা হবে।”

২০২২ সালে ছাড়পত্র পাওয়ার পরও এটি হবে বিমানবন্দরটির প্রথম কার্গো ফ্লাইট।

একটি ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল 'কিছু ঘটনা'কে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেননি।

যদিও এই সিদ্ধান্তের ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছু বাধা সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিল্প নেতারা বাংলাদেশের জন্য কার্গো অবকাঠামো উন্নয়নের একটি সুযোগ দেখছেন।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আকাশপথে বিকল্প ব্যবস্থা থাকায় রপ্তানিতে বড় ধরনের ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, যদি সিলেট বিমানবন্দর কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে রপ্তানি কার্যক্রম সেখানে স্থানান্তর সম্ভব।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন একে সিলেট, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর ও লালমনিরহাট বিমানবন্দর ব্যবহারের 'নতুন সুযোগ' হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে—এটাই এখন একমাত্র বিকল্প।”

এদিকে ভারতের সিদ্ধান্তের পর ঢাকা থেকে এয়ার কার্গো খরচ বেড়ে গেছে। ইউরোপমুখী পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি পরিবহন ব্যয় ৬.৩০–৬.৫০ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রগামী পণ্যের ক্ষেত্রে ৭.৫০–৮.০০ ডলারে পৌঁছেছে। অথচ একই ধরনের পণ্য কলকাতা থেকে পাঠাতে প্রতি কেজি খরচ ৪ ডলার এবং মালদ্বীপ থেকে ৩.৫০ ডলার।

এ প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ হাতেম সরকারকে পরিবহন ব্যয় কমানোর আহ্বান জানান। আর ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ- বেবিচক, এয়ারলাইন্স ও ফরওয়ার্ডারদের মধ্যে আরও কার্যকর সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি ইউএই, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ রুট ব্যবহার করে প্রতিযোগিতামূলক হারে পণ্য পরিবহনের পরামর্শ দেন।

বর্তমানে আটটি কার্গো এয়ারলাইন্স ঢাকা হয়ে চলাচল করছে। এর মধ্যে রয়েছে এমিরেটস, কাতার ও টার্কিশ এয়ারলাইন্স। বছরের শেষ নাগাদ চালু হতে যাওয়া তৃতীয় টার্মিনালের মাধ্যমে অটোমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্গো সক্ষমতা দশগুণ বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে।

বেবিচক-এর মনজুর কবির জানান, “জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ওপর নির্ভর করছে এই সময়সীমা।” তিনি বলেন, “এক মাসের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ছয় মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু হতে পারে।”

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে