ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

১২৪ আলোকবর্ষ দূরে প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ, গবেষণায় উত্তেজনা

২০২৫ এপ্রিল ১৭ ১৩:৩৬:১৫
১২৪ আলোকবর্ষ দূরে প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ, গবেষণায় উত্তেজনা

ডুয়া ডেস্ক : অবশেষে বহির্বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে মানবজাতির দীর্ঘ অনুসন্ধান আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। নাসার জ্যোতির্বিদেরা দাবি করেছেন, পৃথিবী থেকে প্রায় ১২৪ আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে পাওয়া গেছে প্রাণের সম্ভাব্য রাসায়নিক চিহ্ন। গ্রহটির নাম কে২-১৮বি, যেখানে বিশাল সমুদ্র এবং অণুজীবের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) ব্যবহার করে গবেষকেরা কে২-১৮বি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ডাইমিথাইল সালফায়েড (DMS) ও ডাইমিথাইল ডিসালফায়েড শনাক্ত করেছেন। পৃথিবীতে এই দুটি উপাদান সাধারণত জীবিত প্রাণী, বিশেষ করে সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাংকটন থেকেই উৎপন্ন হয়।

গবেষণার নেতৃত্বে থাকা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিক্কু মধুসূদন বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি, তা সম্ভবত জীবনের ইঙ্গিত—এটি হতে পারে এ পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ।”

তবে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে এখনই নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাচ্ছেন না। তাঁরা সতর্ক করে বলেছেন, এই আবিষ্কারের জন্য যে পরিসংখ্যানগত নিশ্চয়তা (Five Sigma) প্রয়োজন, তা এখনো পাওয়া যায়নি। ফলে আরও পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

কে২-১৮বি একটি ‘হাইসিয়ান’ গ্রহ—যে ধরনের গ্রহে বিশাল পানি-মহাসাগর এবং হাইড্রোজেন-সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল থাকতে পারে। এটি এমন এক কক্ষপথে ঘুরছে, যাকে ‘গোল্ডিলক্স জোন’ বলা হয়—যেখানে তরল পানির উপস্থিতি সম্ভব।

২০২৩ সালেই JWST এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড শনাক্ত করেছিল। এবার আরও একধাপ এগিয়ে DMS-এর উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

তবে এই আবিষ্কার নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেমন্ড হামবার্ট মনে করেন, গ্রহটি এতটাই উত্তপ্ত হতে পারে যে, সেখানে পানি নয়, বরং লাভার মহাসাগর থাকতে পারে। এমআইটি-র অধ্যাপক সারা সিগার বলেন, “এ ধরনের দাবি অতীতেও এসেছে, কিন্তু পরে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।” তাঁর মতে, আমাদের সৌরজগতের মঙ্গল, শুক্র কিংবা শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসেই প্রাণের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

তবে মধুসূদন আশাবাদী। তাঁর ভাষায়, “আর মাত্র ১৬-২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করতে পারলেই আমরা নিশ্চিত হতে পারব। হয়তো খুব শিগগিরই আমরা জেনে যাব—এই মহাবিশ্বে আমরাই কি একমাত্র, নাকি অন্য কোথাও কেউ আছে।”

প্রসঙ্গত, এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ। তথ্যসূত্র: এএফপি, সায়েন্স অ্যালার্ট

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

তথ্য প্রযুক্তি এর সর্বশেষ খবর

তথ্য প্রযুক্তি - এর সব খবর



রে