ঢাকা, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১

ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড়

২০২৫ এপ্রিল ০১ ১৪:৫৯:৩৮
ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড়

ডুয়া নিউজ: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি চীন সফরের সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে ল্যান্ডলকড, অর্থাৎ স্থলবেষ্টিত। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগের উপায় নেই। আমরাই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।”

ড. ইউনূসের এই মন্তব্য ভারতের নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তাঁদের মধ্যে কিছু উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে ড. ইউনূসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত হওয়ার তাৎপর্য আসলে কী?”

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্যকে ‘অবাক করা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, "উত্তর–পূর্বাঞ্চল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।" ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বীণা সিক্রি বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য অত্যন্ত হতাশাজনক। এই ধরনের মন্তব্য করার কোনো অধিকার তাঁর নেই।"

তিনি আরও বলেন, "তিনি (ড. ইউনূস) জানেন যে, উত্তর–পূর্ব ভারত অবিচ্ছেদ্যভাবে ভারতের অংশ এবং উত্তর–পূর্ব ভারতের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তিও রয়েছে।"

বীণা সিক্রি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশের ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, "আমি বাংলাদেশকে একটি বিষয় খুব স্পষ্টভাবে বলতে পারি—যদি তারা উত্তর–পূর্ব ভারতকে (মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে) সংযোগের অধিকার দিতে আগ্রহী না হয়, তবে তারা 'জলপথের অধিকার' হিসেবে কোনো অধিকার আশা করতে পারে না। তাই তাদের এটি খুব স্পষ্টভাবে জানা উচিত এবং এ বিষয়ে তাদের কোনো ভুল ধারণা রাখা উচিত নয়। আমাদের এই বিবৃতির নিন্দা জানানো উচিত।"

ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বকশি এএনআই–এর কাছে ড. ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দাবি করেন, 'ভারত বাংলাদেশ তৈরি করেছে এবং তা করার সময় কোনো মানচিত্রগত সুবিধা নেয়নি। বকশি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকারী রুট শিলিগুড়ি করিডরকে কাজে লাগিয়ে ভারতের শ্বাসরোধ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করছে।'

বকশি আরও বলেন, "আমরা বাংলাদেশ তৈরি করেছি। বাংলাদেশ তৈরির সময় আমরা কোনো মানচিত্রগত সুবিধা নিইনি। বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান সম্প্রতি চিকেনস নেক (শিলিগুড়ি করিডর) এবং ভারতের গলা চেপে ধরে সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে কথা বলছে। এখন বাংলাদেশ বলছে, চীনের সাহায্য করা উচিত এবং শিলিগুড়ি করিডরের ওপর নির্ভরশীল সাতটি ল্যান্ডলকড রাজ্যে প্রবেশ করা উচিত।"

তিনি বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে বলেন, "তারা (বাংলাদেশ) বুঝতে পারছে না যে, আমরা বাংলাদেশের বিপরীত দিকে একই কাজ করতে পারি। আমরা সমুদ্রের ওপার থেকে তাদের টুঁটি চেপে ধরতে পারি।" তিনি আশ্বাস দেন, ভারত সরকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এবং ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, "ভারত সরকার এ নিয়ে মিডিয়ার কাছে ছুটে গিয়ে হইচই করবে না। সরকার ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছে। এমনকি ইউনূসও জানেন ভারত কী করতে চলেছে।"

ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্বশর্মা এই মন্তব্যকে “অপত্তিকর” এবং “নিন্দনীয়” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “এই মন্তব্য ভারতের কৌশলগত শিলিগুড়ি করিডরের দুর্বলতা তুলে ধরে।”

কংগ্রেসও ড. ইউনূসের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এটি “বিপজ্জনক” বলে অভিহিত করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে, ভারত সরকার মণিপুরসহ উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের নিরাপত্তা সুরক্ষায় যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছে না।

কংগ্রেসের পক্ষে পবন খেরা বলেন, “বাংলাদেশ চীনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে বিপদে ফেলছে, যা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই ক্ষতিকর।”

ড. ইউনূসের মন্তব্যের পর ভারতের রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা তৈরি হলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে