ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

হাসিনার আমলেও গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন আহসান এইচ মনসুর

২০২৫ মার্চ ৩০ ১৬:৪০:৫৭
হাসিনার আমলেও গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন আহসান এইচ মনসুর

ডুয়া নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুরকে সাধারণত একজন শান্ত, সংযত ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ইঙ্গিত দেয়, তিনি বেশ কয়েকজন ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য অবজারভার ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, শেখ হাসিনার সরকারের সময়ও তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তবে তিনি তা গ্রহণ করেননি।

এই মাসে ৭৪ বছর বয়সী আহসান এইচ মনসুর লন্ডনে অবস্থান করেন, যেখানে তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট, বিভিন্ন এনজিও, আইনজীবী এবং সম্পদ অনুসন্ধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ খুঁজে বের করতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

তাঁর এই সফরের আগে ব্রিটিশ কয়েকজন এমপির কাছে তাঁকে নিয়ে সম্মানহানিকর ই-মেইল পাঠানো হয়। কে বা কারা এই প্রচারণার পেছনে রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে ব্রিটিশ এমপিরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং ই-মেইল প্রেরকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। এক এমপি এটিকে 'ভিত্তিহীন অপপ্রচার' বলে অভিহিত করেছেন।

দ্য অবজারভারের প্রতিবেদনে আহসান মনসুর বলেছেন, "আমরা বাংলাদেশ থেকে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে কাজ করছি। আমরা জানি কারা এই অর্থ পাচার করেছে এবং তারা আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে।"

এছাড়াও, কিছু ই-মেইলে এমন 'সাংবাদিকদের' প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়, যাদের নাম ও পরিচয় ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে বিশেষভাবে মনসুরের মেয়ে মেহরিনের জীবনযাত্রার উপর জোর দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, "আমার মেয়ে একজন মার্কিন নাগরিক, বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর সংযোগ খুবই কম। তাঁর পোশাক বা জীবনধারার বিষয়ে আলোচনা কেন জরুরি? আমার উপদেষ্টারা বিষয়টি উপেক্ষা করতে বলেছেন। তবে যদি আমি পদত্যাগ করি, তাহলে দুর্নীতিবাজরা জিতবে।"

একটি ব্রিটিশ খ্যাতি ব্যবস্থাপনা সংস্থা অভিযোগ করেছে, আহসান এইচ মনসুরকে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মন্ত্রী এবং শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের 'মানহানি করতে প্রস্তুত' বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেছেন, তিনি টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্তের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তাঁর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংক থেকে লুট হওয়া অর্থ উদ্ধার করা।

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা সীমিত হলেও ব্রিটেন এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যেমন দ্য গার্ডিয়ান, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও আলজাজিরার তদন্তে উঠে এসেছে যে, হাসিনা সরকারের কিছু সদস্য লন্ডনের রিয়েল এস্টেট খাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে এটি তদন্তাধীন রয়েছে।

আহসান মনসুর উল্লেখ করেন, "যুক্তরাজ্যের আইনগত কাঠামো দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম। আমরা আশা করি, এখান থেকে প্রাপ্ত সাফল্য অন্য দেশেও পুনরাবৃত্তি করা যাবে।"

তিনি জানান, পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাজ্যে থাকা পাচারকৃত সম্পদের বিরুদ্ধে ফ্রিজিং অর্ডার জারির জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হবে। তিনি বলেন, "আমরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছি এবং এ বছর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আশা করছি।"

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করা জরুরি বলে মনসুর মনে করেন। তিনি বলেন, "৭০ বছর বয়সে অবসর জীবন ত্যাগ করে আমি এই কাজ করতে এসেছি, যদিও এটি আমার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রতিদিন আমি ১৫টি বৈঠক করছি।"

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) ২৫ বছর কাজ করা এই অর্থনীতিবিদ বলেন, "আমি জানতাম, শেখ হাসিনার সরকার আমাকে তিন মাসের মধ্যে বরখাস্ত করবে, আর তারপর আমাকে চুপ থাকতে হবে বা দেশ ছাড়তে হবে। আমি তা চাইনি।"

তিনি স্বীকার করেন, শেখ হাসিনার সরকার এত দ্রুত ক্ষমতা হারাবে, তা কল্পনাও করেননি। তবে তিনি বলেন, "আমি জানতাম, তাদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা একদিন ধ্বংস ডেকে আনবে। অবশেষে তা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয়, এবং আমি আশাবাদী যে বাংলাদেশ আরও ভালো পথে এগিয়ে যাবে।"

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে