ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ভারতে বাংলাদেশিকে হেনস্তা

২০২৫ মার্চ ২৬ ১৬:৩০:০৫
মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ভারতে বাংলাদেশিকে হেনস্তা

ডুয়া ডেস্ক : গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই বাংলাদেশ নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা তথ্য, গুজব ও প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়েছে ভারতীয় মিডিয়া। এর ফলে দেশটির সাধারণ মানুষের মনে বাংলাদেশিদের প্রতি ঘৃণা জন্ম নিয়েছে। এ কারণে প্রায়ই ভারতে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এবার লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের চ্যাংরাবান্ধায় বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী এক ব্যক্তিকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চরম হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

হেনস্তার শিকার ওই ব্যক্তির নাম আজাদুর রহমান আজাদ। তিনি রাজধানীর পল্লবী এলাকার বাসিন্দা।

জানা যায়, আজাদ বুড়িমারী দিয়ে সকালে ভারতে প্রবেশ করেন। বিকেলে তাকে সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াংয়ের একটি বোর্ডিং স্কুলে পড়ুয়া ছেলেকে আনতে ভারতে যান তিনি।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে চ্যাংড়াবান্ধায় এক কাস্টম কর্মকর্তার ইন্ধনে কয়েকজন গাড়িচালক ও মানি এক্সচেঞ্জ কর্মচারীর যোগসাজসে তাকে হেনস্তা করার ঘটনা ঘটে। হেনস্তার শিকার আজাদুর রহমান সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

আজাদুর রহমান বলেন, “ভারতীয় ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শেষে তাকে কোনো গাড়িতে উঠতে না দিয়ে চ্যাংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন থেকে চ্যাংরাবান্ধা বাইপাস পর্যন্ত হেঁটে যেতে বাধ্য করে কিছু মানুষ। সেখানে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আশ্রয় নিলে সেখানেও তাকে ঘিরে ধরা হয়। পরে সেখান থেকে আজাদকে মেখলিগঞ্জ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে বিকেলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ফেরার সময়ও সেদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশের সামনে ওই বাংলাদেশিকে হেনস্তার চেষ্টা করা হয়।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “কোনো দালাল না ধরে নিজে নিজেই ভারতীয় কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করা এবং কাস্টমস কর্তকর্তার দেখিয়ে দেওয়া মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে ডলার না ভাঙানোয় সেদেশের কয়েকজন গাড়িচালক ও মুদ্রা বিমিনয় কেন্দ্রের কর্মচারীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়। মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয় যে তিনি ভারতে প্রবেশ করে সেদেশকে গালাগালি করেছেন।”

একপর্যায়ে আজাদ প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে চ্যাংড়াবান্ধা সড়কের ট্রাফিক পুলিশের শরণাপন্ন হন। এ সময় ভারতীয় কয়েকজন চালক ও মানি এক্সচেঞ্জ কর্মচারীর অভিযোগে মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি ও চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ডাকা হয়। পরে ওই কর্মচারীরা আজাদকে ঘিরে ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে তার ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। তারা দাবি করেন, আজাদ ভারত সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে পুলিশের গাড়িতে করে আজাদকে চ্যাংড়াবান্ধায় পাঠানো হয়।

চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন পুলিশ আজাদকে ভারতের ভেতরে না গিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরবর্তীতে তারা তার ভিসা বাতিল করে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে কিছু কর্মচারী ও চালক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা পুলিশ ও বিএসএফকে জানায়, আজাদ যদি ক্ষমা না চান, তাহলে তাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না। এ সময় তারা চিৎকার করে ‘জামায়াতি’, ‘বাংলাদেশি আতঙ্কবাদী’, ‘ধর ধর’, ‘লাথি মার’ ইত্যাদি উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বিকেলে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ আজাদকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।

সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে আজাদ প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, “চ্যাংড়াবান্ধায় কোনো দালালের সহায়তা না নেওয়া এবং স্থানীয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট মানি এক্সচেঞ্জ দোকান থেকে টাকা বিনিময় না করায় কিছু গাড়ি চালক ও মানি এক্সচেঞ্জ কর্মচারীরা মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে তাকে হয়রানি ও অপমান করেছে। এ কারণে তিনি ঈদের সময় তার ছেলেকে আনতে পারেননি। তিনি ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশন ও বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও মিথ্যা অপবাদের বিচার দাবি করেন।”

এ বিষয়ে বুড়িমারী ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, তিনি শুনেছেন, ওই ব্যক্তি ভারতে গিয়ে শেয়ারিং গাড়িতে ওঠা নিয়ে চালকের সঙ্গে বিরোধে জড়ান। এ সময় ভারত সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, যার ফলে তাকে ফেরত পাঠানো হয়।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে