ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

মাসুদ হত্যার বিচার দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

২০২৪ ডিসেম্বর ২১ ১৩:৩৯:৩৬
মাসুদ হত্যার বিচার দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

ঢাবি প্রতিনিধি : গত ২০ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর ৩০০ ফিট রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় বুয়েটের তিন শিক্ষার্থী সিএসই (২০২১) ব্যাচের ছাত্র মোহতাসিম মাসুদ (নজরুল হল), অমিত সাহা (আহসানুল্লাহ ২৩) এবং মোঃ মেহেদি হাসান খাঁন (নজরুল হল) গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে মাসুদ নিহত হন।

এই ঘটনার বিচার দাবিতে আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২ টায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর মূল ঘটকের সামনে শহীদ মিনারের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা আমার ভাই মরলো কেন- বিচার চাই বিচার চাই, আমার ভাই মরলো কেন- জবাব চাই জবাব দাও, মদ্যপ চালকের শাস্তি চাই- আমার ভাইয়ের ন্যায়বিচার চাই, দুর্ঘটনা নয়-নৃশংস হত্যাকান্ড, মদ খেয়ে গাড়ি চালান-আর কত নিবেন জান, ক্ষমতার কোন ঠাঁয় নাই-মাসুদ হত্যার বিচার চাই, জাস্টিস ডিলেয়েড-জাস্টিস ডিনায়েড, ন্যায় নাকি ক্ষমতা-ন্যায়বিচার ন্যায়বিচার, সড়কে লাশের মিছিল আর কত, হত্যাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিবেন না ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করেন।

এসময় তারা একটি লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনাগলে পৌঁছে আমরা মাসুদ, অমিত এবং মেহেদির শরীর অবচেতন অবস্থায় পাই। তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার ব্রিগেডের সাহায্যে আমরা তাদের তিনজনকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি দুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, একই সময়ে বাকি শিক্ষার্থীরা দলে দলে ঘটনাস্থল এবং কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে তারা দেখতে পায়, দুর্ঘটনায় জড়িত প্রাইভেট কারটির চালক এবং তার সহযাত্রীদের প্রত্যক্ষদর্শী এবং পথচারীরা ঘিরে রেখেদে। উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীর কথা শুনে এবং ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে আমরা যা জানতে পারি, তা হলো-

অমিত, মাসুদ এবং মেহেদিকে পূর্বাচল ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট মোড়ের ওপরের টার্নিংয়ে ডিউটিরত পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য দাঁড় করায়। এ সময় পেছন থেকে একটি প্রাইভেট কার বেপরোয়া গতিতে এসে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেল-সহ তিনজনকে আঘাত করে। এর ফলে তারা তিনজন সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ছিটকে পড়ে।

গ্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন মুবিন আল মামুন (সাদমান) এবং তার সঙ্গে ছিলেন মিরাজুল করিম এবং আসিফ চৌধুরী। উল্লেখ্য যে, চালক সাদমান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেশ আব্দুল্লাহ আল মামুনের সন্তান। শিক্ষার্থীরা ঘটনাগুলে পৌছালে চালকের বাবাকেও সেখানে উপস্থিত দেখতে পায়। পরবর্তীতে তাদের প্রাইভেট কার পর্যবেক্ষণ করে আমরা অ্যালকোহল এবং মদজাতীয় নেশাদ্রব্যের উপস্থিতি পাই।

কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌছায়। পুলিশ প্রাইভেট কারের চালকসহ তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রখনে রূপগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তাদেরকে রূপগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়। এসময় শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে ঘানায় পৌঁছায়। থানায় ঘটনার বিবরণ জানার পরে কর্তব্যরত এসআই মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে অসহযোগিতামূলক আচরণ করতে থাকেন।

বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, সময় আমরা আমাদের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করি এবং আনুমানিক সকাল আটটায় আরও একদল শিক্ষার্থী বুয়েটের কতিপয় শিক্ষক, চিফ সিকিউরিটি অফিসার এবং হেড গার্ডসহ খানায় উপস্থিত হন। তখন খানায় কোনো ওসি উপস্থিত ছিলেন না এবং তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বিলম্ব করতে থাকেন। প্রায় ঘন্টাখানেক দর ওসি খানায় উপস্থিত হন এবং শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেন। এ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং চালকের পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে মামলার ঘটনাপ্রক্রিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্তের মা নানাভাবে শিক্ষার্থীদের মামলা থেকে দূরে থাকতে ক্ষতিপূরণ প্রদানের কথা জানান। এক পর্যায়ে তার সন্তান মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলো শুনে তিনি বলেন, তার সন্তান ড্রাম হলেও ওরা এত রাতে ওমানে কী করছিলো। এরকম অনভিপ্রেত মন্তব্য এবং প্রভাব খাটানোর চেষ্টায় বুয়েটের আপামর শিক্ষার্থী অভাব্য ক্ষুব্ধ হয়।

অবশেষে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে মামলার ড্রাফট লেখার কাজ শুরু হয়। সড়ক আইন ২০১৮ ১৯৮ এবং ১০৫ ধারায় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে নিহত মাসুদের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়। একই সময়ে কতিপয় শিক্ষার্থীসহ অভিযুক্তদের ডোপ টেস্টের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) পাঠানো হয়।

এরপর তারা বলেন, রুপগঞ্জ থানা-পুলিশ গাড়িচালকসহ গ্রেপ্তার এই তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠান। বিচারক আগামী রোববার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে কাল সন্ধ্যায় তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি রবিবার শুনানির মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চলতে থাকবে।

এসব ঘটনা থেকে এটি সুষ্পষ্ট যে, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। বরং চালক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বেপরোয়াভাথে গাড়ি চালিয়ে আমাদের একজন সহপাঠীকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং দুজনকে গুরুতর আহত করে, আমরা ও হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অভিযুক্তদের আইনজীবী গণমাধ্যমে বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। একইসাথে কিছু সংবাদমাধ্যমেও এই হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা বলে অপপ্রচারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা এই অপপ্রচারের তীর নিন্দা জানাই এবং দ্রুততম সময়ে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।

পাশাপাশি আমরা পূর্বেও দেখেছি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যবৃন্দ কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত থাকলেও, ক্যোনা সিভিয়ার অডেন্সে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে প্রভাব খাটিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া থেকে তাদের নিস্তার লাভের দৃষ্টান্ত। আমরা এই ঘটনায় এই ব্যাপারটির আশংকা করছি। শুরু থেকেই মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে টালবাহানা এবং হত্যাকারীর পরিবারের বিভ্রাত্তিকর এবং মিথ্যা তথ্য নিউজমিডিয়ায় প্রদান থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে ভিন্ন দিকে নিবে যাওয়ার প্রচেষ্টা আমাদেরকে শংকিত করেছে। আমরা বিশ্বাদ করি, এই নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে এই খুনের ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে, আমরা মাসুদ, অমিত, মেহেদির সহপাঠীরা তাদের সুবিচার প্রান্তির ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আমার ভাই মরলো কেন- বিচার চাই বিচার চাই, আমার ভাই মরলো কেন- জবাব চাই জবাব দাও, মদ্যপ চালকের শাস্তি চাই- আমার ভাইয়ের ন্যায়বিচার চাই, দুর্ঘটনা নয়-নৃশংস হত্যাকান্ড, মদ খেয়ে গাড়ি চালান-আর কত নিবেন জান, ক্ষমতার কোন ঠাঁয় নাই-মাসুদ হত্যার বিচার চাই, জাস্টিস ডিলেয়েড-জাস্টিস ডিনায়েড, ন্যায় নাকি ক্ষমতা-ন্যায়বিচার ন্যায়বিচার, সড়কে লাশের মিছিল আর কত, হত্যাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিবেন না ইত্যাদি।

সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে তারা বলেন, সড়কের নিরাপত্তা আইন জোরদার করুন, দেশের বিচারব্যবস্থাকে একটি গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করুন। আর কোনো প্রাণ যেনো এভাবে সড়কে কোনো মাতাল, নেশাগ্রস্ত বাক্তির হাতে না ঝড়ে, আর কোনো পরিবার যেনো নিজেদের সন্তানকে না হারান, কোনো মায়ের কোল যেন আর খালি না হয় এই ব্যাপারে দৃষ্টি প্রদানের দায়িত্ব সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সরকারেরও। এই ঘটনার দৃষ্টারমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। অপরাধী যে পরিবারেরই সদস্য হোক নাকোনা, কেউই আইনের উর্ধ্বে নন, এই ব্যাপারটি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হোক।

বুয়েটের এক শিক্ষার্থী নিহত ও দুই শিক্ষার্থী আহত এর ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে তারা পাঁচটি দাবি জানান। এগুলো হচ্ছে-

১. - যেকোনো মূল্যে এই হত্যাকান্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ।

২- আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদীপক্ষকে বহন করতে হবে।

৩- নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করতে হবে।

৪- তদন্ত কার্যক্রমে বাধাপ্রদানের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫- সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর কারো প্রান যেন না যায় এবং সড়কে নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেই ব্যাপারে যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

অবস্থান কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি বুয়েটের মূল ফটক থেকে শুরু হয়ে পলাশী থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে বুয়েটের ৬ নং গেট দিয়ে ঢুকে পুনরায় বুয়েটের মূল ফটকে এসে শেষ হয়। এসময় তারা উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাস্টিস ডিলেয়েড-জাস্টিস ডিনায়েড, আমার ভাই মরলো কেন- বিচার চাই বিচার চাই প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয় এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ববিদ্যালয় - এর সব খবর



রে