ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার, ব্যাংক রেজোলিউশন অ্যাক্ট কার্যকরের পরিকল্পনা

২০২৫ মার্চ ১৩ ১৭:৩৮:০৬
কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার, ব্যাংক রেজোলিউশন অ্যাক্ট কার্যকরের পরিকল্পনা

ডুয়া ডেস্ক: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ব্যাংক রেজোলিউশন অ্যাক্ট কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এই আইনের উদ্দেশ্য হলো আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, পেমেন্ট, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট সিস্টেমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, ব্যাংক জমা সুরক্ষিত করা, সরকারি আর্থিক সহায়তা কমিয়ে সরকারি তহবিল সংরক্ষণ করা, সম্পদের মূল্য ধ্বংস এড়ানো এবং ঋণদাতাদের ক্ষতি কমানো। এর পাশাপাশি আর্থিক ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা বজায় রাখাও এই আইনের মূল লক্ষ্য।

বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। এ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে এবং দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে হবে।

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এনপিএল (Non-Performing Loan) শ্রেণিবদ্ধ করার সময়সীমা নয় মাস থেকে কমিয়ে ছয় মাসে পরিণত করে, যার ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ডিসেম্বর মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন টাকা (২৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ২,৮৪০ ডলার), যা সেপ্টেম্বরে ছিল ২ দশমিক ৮৪ ট্রিলিয়ন টাকা অর্থাৎ ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি বাংলাদেশের মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ২০ শতাংশ।

ঢাকার ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে. মুজেরি দেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা 'ভয়াবহ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "ব্যাংকিং খাত এখন খাদের কিনারায়। সরকারের উচিত ছিল অনেক আগেই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যেমন: দুর্বল ব্যাংকগুলো বন্ধ করে দেওয়া, যাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই।"

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, এপ্রিলে মানদণ্ড কঠোর হওয়ার পর পরবর্তী কোয়ার্টারে এনপিএল দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, অতীতে বড় ও প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের সাহায্য করতে খেলাপি ঋণ গোপন করা হতো। এখন সেই 'খারাপ প্রথা' বন্ধ হওয়ায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, নতুন মানদণ্ড চালু হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ হতে পারে।

গত জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে সমস্যাগ্রস্ত সম্পদের মোট মূল্য ছিল ৬ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন টাকা।

গত বছর কিছু ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সেগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছু দুর্বল ব্যাংক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করেছিল। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপসারণের পর এই উদ্যোগটি থেমে যায়।

কর্তৃপক্ষ বলছে, আগের সরকারের রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীরা কিছু ব্যাংক লুটপাট করেছেন। বাংলাদেশের নতুন নেতৃত্ব এখন ব্যাংকগুলোর জন্য সহায়তা দিচ্ছে তবে কর্তৃপক্ষ মনে করে যে সংগ্রামরত ব্যাংকগুলোর টিকে থাকার জন্য একীভূত হওয়া প্রয়োজন।

একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সহজ করতে ঢাকা ব্যাংক রেজোলিউশন অ্যাক্ট প্রস্তুত করছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ নামে পরিচিত। এই আইনে একীভূতকরণ, পুনঃপূজায়ন, ব্রিজ ব্যাংক, অস্থায়ী মালিকানা এবং ব্যাংক বন্ধ করার মতো বিধান থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মনসুর বলেন, "আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণের চেষ্টা করব, তাদের জন্য নতুন বিনিয়োগকারী আনব এবং তাদের পুনর্গঠন করব।"

দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে এখনও ব্যাংক বন্ধ করার জন্য কোনো আইন নেই। মনসুর বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয়টি ব্যাংকের সম্পদ গুণগত মান পর্যালোচনা করছে এবং শীঘ্রই অন্যান্য ব্যাংকের জন্য একই প্রক্রিয়া শুরু করবে। এরপর আমরা ব্যাংক রেজোলিউশন অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেব।"

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, "অতীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে বকেয়া থাকা ঋণকে খেলাপি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করত। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে এবং কোভিড-১৯ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব কমাতে এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছিল। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক সেরা অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আবারও এই নিয়ম কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"

তথ্য: নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন থেকে

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে