ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

খুবির শোক দিবস আজ : কী ঘটেছিল ২০০৪ সালের এদিন

২০২৫ মার্চ ১৩ ১৪:৫৮:০৬
খুবির শোক দিবস আজ : কী ঘটেছিল ২০০৪ সালের এদিন

ডুয়া ডেস্ক: ১৩ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শোক দিবস। ২০০৪ সালের আজকের দিনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা সুন্দরবনে বেড়াতে গিয়ে এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় পড়েন। সেদিন কটকা সী-বিচে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে হঠাৎ জোয়ারের স্রোতে অনেকেই সমুদ্রে হারিয়ে যান। স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে কেউ কেউ তীরে ফিরে আসতে পারলেও ১১ জন ফিরে আসতে পারেননি।

এ ঘটনাকে কটকা ট্র্যাজেডি বলা হয় এবং প্রতিবছর এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

কী ঘটেছিল সেদিন?

২০০৪ সালের ১২ মার্চ রাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৭৮ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং ২০ জন অতিথি নিয়ে খুলনা থেকে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। সারারাত লঞ্চযাত্রা শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা কটকা নিকটবর্তী বাদামতলী এলাকায় পৌঁছান। এরপর বেলা ১টার দিকে গভীর অরণ্য পেরিয়ে তারা কটকা সৈকতে পৌঁছান।

যাত্রার ক্লান্তি যেন দূর হয়ে গিয়েছিল সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে। কিছু শিক্ষার্থী সাগর পাড়ে হাঁটতে শুরু করেন, কেউ বল খেলছেন, আবার কেউ গোসল করতে নামেন। আনন্দ ও উল্লাসের মধ্যে হঠাৎ শোনা যায় আতঙ্কিত চিৎকার। কয়েকজন শিক্ষার্থী ভাটার স্রোতের কবলে পড়েন। ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকারে পরিবেশ এক নিমিষে গম্ভীর হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই বিষয়টি বুঝতে পারেন—কিছু শিক্ষার্থী সাগরের ঢেউয়ের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছিল।

কেউ কেউ ছুটে গিয়ে উদ্ধার করতে চেষ্টা করেন কিন্তু অনেকেরই প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়নি। যারা বেঁচে ফিরেছেন তারা বালুর ওপর শুয়ে হাপাচ্ছিলেন। রূপা ও কাউসারকে উদ্ধার করলেও ততক্ষণে তাদের জীবন শেষ হয়ে গিয়েছিল। চোখের সামনে প্রিয় সহপাঠীদের মৃত্যু দেখে অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

পরিস্থিতি এতটাই হৃদয়বিদারক ছিল যে গাছের ডাল আর লুঙ্গি দিয়ে স্ট্রেচার তৈরি করে রূপা ও কাউসারকে লঞ্চঘাটের দিকে নিয়ে আসা হয়। সবাই একে একে লঞ্চে উঠে নাম ধরে ডাকতে থাকে কিন্তু ৯ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের আর কখনো দেখা যায়নি। সাগর গ্রাস করে নেয় ১১টি তরতাজা প্রাণ।

শেষে লঞ্চ খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নীচতলায় দুটি নিথর দেহ চাদরে ঢেকে রাখা হয়। সবাই চুপচাপ, কেউ বসে, কেউ শুয়ে, কেউ রেলিংয়ে হেলান দিয়ে আছেন। মাঝে মাঝে কান্নার শব্দ ভেসে আসে। এমন পরিস্থিতিতে এক ধরনের শূন্যতা, দুঃখ এবং শোক পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।

যাদের হারিয়ে এসেছিলেন

• তৌহিদুল এনাম (অপু): চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া অপু (পৈত্রিক নিবাস ফেনী) মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, ঢাকা ও ঢাকা আইডিয়াল কলেজ শেষে ভর্তি হয় খুবির স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে। চমৎকার আবৃতি করতেন। লেখালেখিও করতেন। খুবির প্রথম নাট্য সংগঠন নৃ-নাট্যের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম সদস্য।

• আব্দুল্লাহ-হেল বাকী: খুলনা পাবলিক কলেজে স্কুল এবং খুলনা সুন্দরবন কলেজে শিক্ষা শেষে খুবির স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে ভর্তি হন। ভালো ছড়া লিখতে পারতেন। বই পড়া ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন।

• কাজী মুয়ীদ ওয়ালি (কুশল): আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা তে স্কুল জীবন পরে কোডা কলেজ অব অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট কলেজ শেষে খুবিতে। ভালো ছবি আকতে পারতেন, বই পড়তেন। মেডিটেশন করতেন নিয়মিত।

• মো. মাহমুদুর রহমান (রাসেল): চট্টগ্রাম কলিজিয়েট স্কুল ও চট্টগ্রাম হাজী মো. মহসীন কলেজ শেষে খুবিতে। জন্মস্থান চাঁদপুর। টেবিল টেনিস খেলা পছন্দ করতেন।

• মো. আশরাফুজ্জামান তোহা: স্কুল-কলেজ কাটিয়েছেন হারম্যান মাইনার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর, ঢাকাতে। জন্মস্থান ছিল যশোরে। ভাল গাইতেন এবং গীটার বাজাতেন।

• আরনাজ রিফাত রূপা: জন্ম ঢাকায়। স্কুল কেটেছে কাকলী বিদ্যালয় এবং কলেজ বদরুন্নেছা কলেজ, আজিমপুর ঢাকায়। ভালো রান্না পারতেন, অন্যকে রেধে খাওয়াতে পছন্দ করতেন।

• মাকসুমমুল আজিজ মোস্তাজী (নিপুন): জন্ম দিনাজপুরে। স্কুল কেটেছে দিনাজপুর জিলা স্কুলে পরে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে। সর্বদা হাশিখুশি থাকতেন। ভালো কবিতা আবৃতি করতেন ও লিখতেন। বিতর্ক ও আড্ডায় তার জুড়ি ছিল না।

• মো. কাউসার আহমেদ খান: স্কুল বনানী বিদ্যা নিকেতনে পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজ। জন্ম ঢাকায়। কম্পিউটারে গেমস খেলতে পছন্দ করতেন। স্বল্পভাষী ছিলেন, বই পড়তেন আর ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন।

• মুনাদিল রায়হান বিন মাহবুব শুভ: জন্মস্থান যশোরে। স্কুল-কলেজ কেটেছে দাউদ পাবলিক স্কুল ও কলেজ, যশোরে। বই পড়তেন খেলাধূলা করতেন। ঘুরে বেড়ানো ছিল তার শখ।

• শামসুল আরেফিন শাকিল: বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে পড়াশুনা করতেন। স্কুল কেটেছে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে নটরডেম কলেজে। তিমি ছিলেন ভ্রমণপ্রিয়। দেশের প্রায় ৪০টি জেলা ভ্রমণ করেছেন। অকাতরে বন্ধুদের সুখে-দুখে পাশে দাঁড়াতেন। কটকা সৈকতে দুর্ঘটনায় ১১জনকে উদ্দেশ্য করে টঙ্গীতে তাঁর বাবা একটা স্মৃতিসৌধ করেছেন।

• সামিউল হাসান খান: আইডিয়াল প্রি-ক্যাডেট স্কুল কলেজ, ঢাকা ও নটরডেম কলেজ শেষে পড়াশুনা করতেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে। জন্মস্থান ঢাকায়। সাধারণ জ্ঞান ভাল পারতেন, বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নিতেন। কবিতা লিখতেন।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

বিশ্ববিদ্যালয় এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ববিদ্যালয় - এর সব খবর



রে