ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

গ্যাস সংকট মোকাবিলায় ১০০ নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা সরকারের

২০২৫ মার্চ ১৩ ১০:০০:৩৬
গ্যাস সংকট মোকাবিলায় ১০০ নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা সরকারের

ডুয়া নিউজ: দেশে চলমান গ্যাস সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাস উত্তোলনের লক্ষ্যে আরও ১০০টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে শিল্প, উৎপাদন ও বিনিয়োগ কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, আগের সরকারের আমলে নেওয়া পরিকল্পনার সঙ্গে নতুন অনুসন্ধান পরিকল্পনা যুক্ত করে আরও বিস্তৃত কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা দেশে ব্যাপক হারে গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন করা হলে, কোনো বড় গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়া গেলে তা দেশের জ্বালানি সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সাম্প্রতিক সময় পেট্রোবাংলার একটি পরিকল্পনা অনুসারে, বিদ্যমান ৫০টি কূপ খনন ও ১০০টি কূপ ওয়ার্কওভার কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি প্রকল্পের আওতায় ৫০টি কূপ খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে পাঁচটির খনন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বর্তমানে ৯টি কূপের খনন কাজ চলমান রয়েছে এবং আরও ৩৯টি কূপ খননের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ১০০টি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৬৯টি হবে অনুসন্ধান কূপ এবং ৩১টি হবে ওয়ার্কওভার কূপ।

পেট্রোবাংলা তাদের পরিকল্পনায় দেখিয়েছে, ৬৯টি কূপ যদি ঠিকমতো খনন হয়, তাতে সম্ভাব্য দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন হবে ৯৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর ৩১টি কূপের ওয়ার্কওভার করতে পারলে উৎপাদন বাড়বে ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ১৫টি প্রকল্পের অধীনে ৬৯টি কূপ খনন করা হবে।

১০০ কূপের আর্থিক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে পেট্রোবাংলা দেখিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় করা হবে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল ২ হাজার ৩২০ কোটি এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ৯৮০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০২৬-২৭ অর্থ বছরে খরচ হবে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ২০২৭-২৮ অর্থ বছরে খরচ হবে ৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, ২০২৮-২৯ অর্থ বছরে খরচ হবে ৬ হাজার কোটি টাকা। পুরো টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ হবে ১৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। আর গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে খবর হবে ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে ২০২৬-২৯ সালের মধ্যে স্থলভাগে ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের। অন্তর্বর্তী সরকার এসে প্রথমে এ প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তবে নানা বিচার বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে দেশ উপকৃত হবে। পরে পূর্বের পরিকল্পনার সঙ্গে নতুন করে আরও অনুসন্ধান কূপ খননের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সূত্রে জানা যায়, গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত তিনটি বিতরণ কোম্পানির আওতায় এসব গ্যাসকূপ খনন করা হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) একাই ৬৯টি কূপে খনন করবে।

দেশে গ্যাসের প্রকৃত চাহিদা রয়েছে ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। যদিও জাতীয় গ্রিডে পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে দেশে গ্যাসের বিশাল পরিমাণ ঘাটতি থাকছে। এ ঘাটতি মেটাতে এবং আমদানিনির্ভরতা কমাতে স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিয়েছে সরকারের।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, বাপেক্স একাই ৬৯টি কূপ খননের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ২০২৯ সাল নাগাদ দৈনিক আরও ৯৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান বাড়ানো যাবে। বাকি ৩১টি কূপ খনন করবে গ্যাস উত্তোলন কোম্পানি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে