ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

যা থাকছে ইউনূসের চীন সফরে 

২০২৫ মার্চ ১৩ ০৯:৫২:৩১
যা থাকছে ইউনূসের চীন সফরে 

ডুয়া নিউজ: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফরে মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নসহ ৭ থেকে ৮টি সমঝোতা স্বাক্ষর হতে পারে। এছাড়া, রোবট ফিজিওথেরাপি পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন এবং চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা আগামী ২৬ থেকে ২৯ মার্চ চীন সফর করবেন। ২৬ মার্চ দুপুরে তিনি ঢাকা থেকে চীনের উদ্দেশে রওনা দেবেন এবং হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠিতব্য বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী প্লেনারি সেশনে তিনি বক্তব্য রাখবেন। এ সফরে চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠকেরও পরিকল্পনা রয়েছে।

২৮ মার্চ বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস। একই দিনে তিনি হুয়াওয়ে কোম্পানির উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন এন্টারপ্রাইজ পরিদর্শন করবেন। সফরের অংশ হিসেবে ২৯ মার্চ পিকিং ইউনিভার্সিটি তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে, যেখানে তিনি একটি বক্তব্যও দেবেন। সফর শেষে চীনের একটি বিমানে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।

ঢাকা-বেইজিংয়ের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ড. ইউনূসের বেইজিং সফরকে কেন্দ্র করে ১২ থেকে ১৫টি সমঝোতা স্বাক্ষর করার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। যার মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই) রয়েছে। তবে জিডিআই নিয়ে এখনই সমঝোতা স্বাক্ষর করতে চায় না ঢাকা। চীনের প্রস্তাবিত সমঝোতার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফরে ৮টির মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে রাজি আছে ঢাকা।

মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সহায়তা, ষষ্ঠ চীন-মেত্রী সেতুর সংস্কার, বাংলাদেশ হাইওয়ে নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন (সড়ক সংক্রান্ত দুটি সমঝোতা), খেলাধুলা, প্রতি বছর দুই দেশের নির্বাচিত ৫০টি করে বই বাংলা-চাইনিজ ভাষায় অনুবাদ ও দুর্যোগ সহযোগিতা বিষয়ক প্রকল্প সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।

এ ছাড়া, চীনের সঙ্গে পানি সহযোগিতা সমঝোতা স্মারক নবায়ন নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এটি প্রধান উপদেষ্টার সফরে নবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরে মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন নিয়ে সমঝোতা স্বাক্ষরের পর খুব শিগগিরই কাজ শুরু করবে চীন। ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ নামের চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে চীনের অর্থায়ন ৩ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। বাকি অর্থায়ন করবে সরকার। প্রকল্পটির মেয়াদের সময় ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

মোংলা বন্দরের সুবিধা বাড়াতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। প্রকল্পটি চীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের তাগিদে অনুমোদন করা।

প্রধান উপদেষ্টার বেইজিং সফরে কয়েকটি যৌথ ঘোষণা আসবে। যেগুলোর মধ্যে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে লোগো, বাংলাদেশে চাইনিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন, বাংলাদেশে রোবট ফিজিওথেরাপি পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট স্থাপন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে হাজারখানেক বাংলাদেশি যুবাদের চীন সফর এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এদিকে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরে ২১টি সমঝোতা স্বাক্ষর ও সাতটি ঘোষণা আসে। তিনি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে চীন সফর করেছিলেন। ওই সফরের এক মাস না যেতেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

জানতে চাইলে দায়িত্বশীল এক কূটনীতিক বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে চলতি সপ্তাহের শুরুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে রাজনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, পানি, বৈদেশিক ঋণ, কৃষি, কানেক্টিভিটি, জ্বালানিসহ বিভিন্ন সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টার সফরে কোন কোন বিষয়গুলো তুলে ধরা যেতে পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে।

এ কূটনীতিক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ২৬ থেকে ২৯ মার্চ চীন সফর করবেন। এটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সফর হবে। প্রধান উপদেষ্টার সফরের প্রস্তুতি চলছে। সফরে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে, ৭ থেকে ৮টি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এ ছাড়া কয়েকটি ঘোষণা আসতে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে চীন। প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন চীন সফর পারস্পরিক বোঝাপড়া জোরদার করবে।

গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেন। এরপর নভেম্বরে আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দেন। গত ডিসেম্বরে ড. ইউনূস ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে মিসর সফর করেন।

সবশেষ, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (উব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা আগামী ২৬ মার্চ প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন যাবেন। এটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সফর হবে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে