ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

যুক্তরাজ্যে প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার হলেন ঢাবি’র অ্যালামনাই সদস্য মাহাবুবুর রহমান

২০২৪ ডিসেম্বর ০৩ ১৮:০৯:৩২
যুক্তরাজ্যে প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার হলেন ঢাবি’র অ্যালামনাই সদস্য মাহাবুবুর রহমান

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন-ডুয়া’র সদস্য মো. মাহাবুবুর রহমান ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের লিংকন্স ইন থেকে বার-এট-ল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর আগেই ‘বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডস’ তাকে প্যাকটিসিং ব্যারিস্টার হিসেবে অনুমোদন দেয়। তিনি দীর্ঘদিন সলিসিটর অ্যাডভোকেট হিসেবে যুক্তরাজ্যের সব উচ্চপর্যায়ের আদালতে লিগ্যাল প্রাকটিস করছেন। ইতোমধ্যে তিনি ‘নিউ ওয়াক চেম্বারস’ নামে একটি ব্যারিস্টার চেম্বারে টেনান্সি পেয়েছেন।

ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান তাঁর মেধা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ইউকে’র আইনাঙ্গনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এটি শুধু তার জন্য নয়, বরং আইন অঙ্গনে তাঁর সহকর্মী, বাংলাদেশী কমিউনিটি ও আইনের শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি বড় অনুপ্রেরণা। তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, এমন প্রত্যাশা করেছেন তাঁর সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে চারটি ইনস অব কোর্ট থেকে কল-টু-দ্য বার ডিগ্রি প্রদান করা হয়। চারটি ইন হলো - লিংকনস্ ইন, গ্রেজ ইন, ইনার টেম্পল এবং মিডল টেম্পল। দ্যা অনারেবল সোসাইটি অব লিংকনস্ ইন সবচেয়ে বড় এবং সদস্য সংখ্যা বেশি। দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন হলো ইনার টেম্পল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লিংকনস্ ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি গ্রহণ করেন। মাহাত্মা গান্ধী ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নেন ইনার টেম্পল থেকে। ব্যারিস্টার জায়মা রহমানও এই ইন থেকে ব্যারিস্টারী ডিগ্রি নিয়েছেন।

আইনের শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর দেশটির চারটির যে কেনা একটি ইনস অব কোর্ট থেকে কল টু দ্য বার গ্রহণ করতে হয়। এরপর লিগ্যাল প্রাকটিসে প্রবেশ করতে হলে অর্থাৎ প্রাকটিসিং ব্যারিস্টার হিসেবে কাজ করতে হলে ১২ থেকে ২৪ মাসের পিউপিলেজ বা প্রাকটিক্যাল ট্রেইনিং সম্পন্ন করতে হয় কোনো সুপারভাইজার ব্যারিস্টারের অধীনে। আর এই পিউপিলেজ বা প্রাকটিক্যাল ট্রেইনিং এর সুযোগ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ।

ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমানের প্রকটিসিং ব্যারিস্টার হওয়ার গল্পটা অনেকটা ভিন্ন আমেজের। তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক থেকে আইন পেশায় যুক্ত হন ২০১৫ সালে। প্রথমে তিনি যু্ক্তরাজ্যের সিটিজেন অ্যাডভাইস বু্যারোতে অ্যাডমিনিসট্রেটর হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি লন্ডনের জেএস সলিসিটর ফার্মে প্যারা লিগ্যাল হিসেবে কাজ করেন।

তিনি লন্ডনের অন্যতম স্বনামধন্য ব্যারিস্টার চেম্বার গার্ডেন কোর্ট চ্যাম্বারে ‘Garden Court Chambers’ খ্যাতিমান বিচারপতি ও ব্যারিস্টার মার্ক সায়েমস্-এর সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। কনসালটেন্ট সলিসিটর হিসেবে কাজ করেছেন আরেকটি স্বনামধন্য সলিসিটর ফার্ম ডিপলক সলিসিটর্সে।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার, অ্যাসাইলাম ও ইমিগ্রেশন এবং মানি লন্ডারিং বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর বৃটেনে ওয়েস্ট মিনিস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা ইন ল’ এবং লিগ্যাল প্রাকটিস কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি বিপিপি ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিল আইনের ওপর হাইয়ার রাইটস্ অব অডিয়েন্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন।

এছাড়া তিনি ২০১৮ সালে সুইডেনের স্টক হোম ইউনিভার্সিটি এবং হেগ’র আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টের (International Criminal Court) যৌথ প্রজেক্টে International Criminal Court -এর কার্যবিধি এবং সমকালীন বিচারকার্যের উপরে গবেষণা সম্পন্ন করেন। বেলজিয়ামের University of Antwerp থেকে তিনি ইউরোপীয়ান মাইগ্রেশন এন্ড ডাইভার্সিটি বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করেছেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছেন প্রেস ইনস্টিটউট অব বাংলাদেশ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ পাঠ গ্রহণ করেন University Of ARTS London (UAL) থেকে। সাংবাদিকতার ওই কোর্স সম্পন্ন করেই তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কাজ করার সুযোগ লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন ২০০১ সালে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর তিনি বাংলাদেশের দৈনিক আমার দেশ, বাংলাবাজার পত্রিকা, ইউকে’র প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্যা গার্ডিয়ান এবং সর্বশেষ বিশ্বখ্যাত রয়টার্স নিউজে কাজ করেছেন। সাংবাদকিতা জীবনে তিনি যেমন বেশক’টি পুরস্কার পেয়েছেন, তেমনি অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখতে গিয়ে জীবন হমুকির মুখোমুখি হয়েছেন।

২০১৩ সালে জাতিসংঘ সম্মেলন কভার করতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ভুয়া সাউথ সাউথ পুরস্কার’র তথ্য ফাঁস করে তিনি আলোচিত হন এবং জীবন হুমকির মুখোমুখি হন। এরপর তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। আইন পেশা ও সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বৃটিশ কাউন্সিলে আইইএলটিএস’র মার্কার হিসেবে কাজ করেছেন কয়েকবছর।

লন্ডনের বিখ্যাত কিংস কলেজ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস্ এন্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স-এ এক্সাম সেকশনে কাজ করেছেন তিনি। এ ছাড়া কাজ করেছেন বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ‘Redress’- এ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছিন্নমূল মানুষের জন্য কাজ করেছেন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান আল খায়ের ফাউন্ডেশনে। তিনি ইউকের খ্যাতিমান চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান ব্রেকিং ব্যারিয়ার্সে (Breaking Barriers) অ্যাম্বেসডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস-এর একজন প্রাকটিসিং সলিসিটর হিসেবে মাহাবুবুর রহমান ২০২১ সাল থেকেই ল’ সোসাইটি ও এসআরএ’র সদস্য। ২০১৮ সাল থেকে তিনি অনারেবল সোসাইটি অব লিংকনস্ ইন এর সদস্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউিনয়ন, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে