ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা ৭০ শতাংশ পর্যটকই ছিল বাংলাদেশি

২০২৫ মার্চ ০৪ ১১:১৭:১২
ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা ৭০ শতাংশ পর্যটকই ছিল বাংলাদেশি

ডুয়া নিউজ: বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা পর্যটকদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চিকিৎসা নিতে আসা বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। যার ফলে চিকিৎসা পর্যটনে আসা মোট বিদেশির মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০ শতাংশের কাছাকাছি।

তবে এই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল ২০২৩ পর্যন্ত। ভারত সরকারের এক তথ্য অনুযায়ী, সেসময় দেশটিতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া মোট বিদেশির মধ্যে বাংলাদেশি ছিল ৭০ শতাংশের বেশি। পাশাপাশি ছয় বছরের ব্যবধানে দেশটির চিকিৎসা পর্যটন খাতে (এমভিটি) বাংলাদেশি চিকিৎসাগ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

বিগত বছরগুলোয় ভারতে চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়লেও অন্যান্য দেশের চিকিৎসা পর্যটকের সংখ্যা কমেছে। ভারতীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিদেশিদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ইরাকিরা।

দেশটি থেকে সে সময় ভারতে যাওয়া চিকিৎসা পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৬৩৮ জন। ২০২২ সালে সে সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৬৯০১ জনে। একইভাবে ২০১৭ সালে ওমান থেকে ভারতে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছিলেন ২৮ হাজার ১৫৫ জন। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ হাজার ১২৫-এ। ২০১৭ সালে মালদ্বীপ থেকে ভারতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন ৪৫ হাজার ৩৫২ জন পর্যটক। ২০২২ সালে তা নেমে আসে ১০ হাজার ৯৭১ জনে।

তবে উন্নত দেশগুলো থেকে ভারতে চিকিৎসার জন্য খুব কমসংখ্যক পর্যটক যায়। ২০২২ সালে দেশটিতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া বিদেশিদের মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলো থেকে।

ভারতীয় থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনসের (আইসিআরআইইআর) এর তথ্য অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোয় ভারতের চিকিৎসা পর্যটনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলি ভারতের এমভিটি খাতকে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাবিত করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে সবসময়ই দেখা গেছে আস্থার সংকট। বিশেষ করে জটিল রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী ভারতে গিয়েছেন প্রচুর বাংলাদেশি।

এছাড়া বাংলাদেশকে এমভিটি খাতের পর্যটকদের বড় উৎস হিসেবে চিহ্নিত করে এ নিয়ে বিশেষ কার্যক্রমও চালিয়েছে দেশটির বেসরকারি হাসপাতালগুলো। এর বাইরেও ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য এবং ভারতের চিকিৎসাসেবার মানও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৫ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২১ হাজার ৬৯৪ জন, যা ওই বছরের মোট চিকিৎসা পর্যটকের ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

২০২২ সালের মধ্যে চিকিৎসা পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কমে নেমে আসে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮১ জনে। যদিও এ সময়ের মধ্যে দেশটিতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে।

২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৫। চিকিৎসা পর্যটনে আসা মোট বিদেশির মধ্যে এ হার দাঁড়ায় ৬৯ শতাংশে।আর সর্বশেষ প্রাক্কলিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটিতে মোট চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা ছিল কমবেশি ৬ লাখ ৩৫ হাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশি চিকিৎসা পর্যটক ছিলেন ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন, যা দেশটিতে চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়াদের মোট সংখ্যার প্রায় ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ।

তবে এ চিত্রে আমূল পরিবর্তন দেখা দিয়েছে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর। কূটনৈতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে বাংলাদেশীদের ভিসা কার্যক্রম অত্যন্ত সীমিত হয়ে আসে। চিকিৎসা ভিসা চালু করা হলেও তা পাচ্ছে খুব কম সংখ্যক আবেদনকারী। এ অবস্থায় ভারতের পরিবর্তে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোকে বেছে নিচ্ছেন বাংলাদেশীরা।

এতে ভারতের চিকিৎসা পর্যটন খাতেও এখন দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ধস। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন চিকিৎসা পর্যটকদের উৎসে বৈচিত্র্যায়ণের পথ খুঁজছে দেশটি।

গত বছরের শেষ দিকে আইসিআরআইইআরের পক্ষ থেকে এক পলিসি পেপার তৈরি করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভারতের চিকিৎসা পর্যটন খাতের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ তৈরি হয়েছে।

ওই পলিসি পেপারের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসা পর্যটন খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ২০২২ সালে ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড রোডম্যাপ ফর মেডিকেল অ্যান্ড ওয়েলনেস ট্যুরিজম’ প্রণয়ন করে ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়। এতে দেশটির চিকিৎসা পর্যটন খাতকে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড তৈরিতে অংশীজনদের দ্বারা মানসম্পন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোর বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। আর এ পরিকল্পনার বড় অংশ জুড়ে ছিলেন বাংলাদেশি রোগীরা।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে