ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

গাজায় সব ধরণের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করল ইসরায়েল

২০২৫ মার্চ ০২ ১৭:১৫:২৩
গাজায় সব ধরণের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করল ইসরায়েল

ডুয়া ডেস্ক : গাজায় গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি ভয়াবহ রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। যদিও পশ্চিমা নেতারা এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চুপ। এবার ইসরায়েল হামাসের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে গাজা উপত্যকায় সব ধরনের মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শনিবার (০১ মার্চ) শেষ হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানিয়েছে, হামাস এখন পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের দেওয়া সাময়িক সম্প্রসারণ প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে হামাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় সহায়তা সরবরাহ বন্ধ করা ‘নোংরা ব্ল্যাকমেইল’ ও যুদ্ধবিরতি চুক্তির ওপর ‘অভ্যুত্থান’। তিনি মধ্যস্থতাকারীদের এতে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠী চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ আগের আলোচনার ভিত্তিতেই বাস্তবায়ন করতে চায়। সেখানে ইসরায়েলি জিম্মি ও আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা থেকে প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত ছিল। হামাস আগেই বলেছিল, মার্কিন, কাতারি ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে দ্বিতীয় ধাপ শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়ার নিশ্চয়তা ছাড়া তারা প্রথম ধাপের কোনো রকম মেয়াদ বাড়াতে রাজি হবে না।

এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জিম্মি মুক্তির চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর এবং হামাস যখন ইসরায়েলের মেনে নেওয়া উইটকফের পরিকল্পনা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তখন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজ সকাল থেকে গাজায় কোনো ধরনের পণ্য ও সরবরাহ ঢুকতে দেওয়া হবে না।

ইসরায়েল জিম্মি মুক্তি ছাড়া যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে না। হামাস তাদের অস্বীকৃতি অব্যাহত রাখলে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে জানিয়েছে দেশটি।

এদিকে হামাসের মুখপাত্র বলেছেন, “গাজায় সহায়তা বন্ধের নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত আবারও ইসরায়েলি দখলদারির নোংরা চেহারা প্রকাশ করেছে...আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, ইসরায়েল সরকারকে আমাদের জনগণকে অনাহারে রাখা বন্ধ করতে বাধ্য করা।”

গতকাল গভীর রাতে নেতানিয়াহুর দপ্তর জানিয়েছে, ইসরায়েল মুসলিমদের রমজান এবং ইহুদিদের পাসওভার উৎসবের সময়কালের জন্য মার্কিন প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তবে, যদি এই সময়সীমার শেষে কোনো সমাধান না পাওয়া যায়, তাহলে ইসরায়েল আবার যুদ্ধ শুরু করার অধিকার লাভ করবে।

মার্কিন দূত উইটকফের প্রস্তাবের বিস্তারিত এখনো প্রকাশিত হয়নি, তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, এটি বেঁচে থাকা এবং মৃত সব জিম্মির অর্ধেককে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হবে।

নেতানিয়াহুর দপ্তরের আগের বিবৃতি অনুযায়ী, উইটকফ ছয় সপ্তাহের সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছেন, কারণ তিনি মনে করেন, যুদ্ধ বন্ধ করার শর্ত নিয়ে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে মতপার্থক্য নিরসনে আরো সময় প্রয়োজন। যদি হামাস ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে, তাহলে ইসরায়েল তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনা শুরু করবে।

১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শনিবার শেষ হয়। এর আওতায় হামাস এবং ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে ১৫ মাসের যুদ্ধ বন্ধ হয় এবং ৩৩ ইসরায়েলি নাগরিকসহ পাঁচ থাই নাগরিক মুক্তি পায়, যার বিনিময়ে প্রায় এক হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পায়।

তবে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এখনো কার্যকরভাবে শুরু হয়নি, যা অন্তর্ভুক্ত করবে বেঁচে থাকা সব বন্দির মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার। বর্তমানে ২৪ জন জিম্মি জীবিত রয়েছে এবং ৩৯ জনকে মৃত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালালে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায়, ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালায়, যার ফলে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায় অন্তত ৪৮ হাজার ৩৬৫ জন নিহত হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে