ঢাকা, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

ঢাবি শিক্ষার্থীদের ৩৬ লাখ টাকা বৃত্তির চেক দিলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২৮ ১৮:১৩:০৪
ঢাবি শিক্ষার্থীদের ৩৬ লাখ টাকা বৃত্তির চেক দিলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল ও মেধাবী ১০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করেছে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে অ্যালামনাই ফ্লোরে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বৃত্তির অর্থ ৩৬ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়।

বৃত্তির অর্থ পেয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বলেন, আর্থিকভাবে সাহায্যের মাধ্যমে তারা আমাদের আশাকে জাগিয়ে রাখছেন। তারা যে প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছে এজন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। ভবিষ্যতে ভালো কোন পর্যায়ে যেতে পারলে এভাবে আমিও অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, আজকে যারা বৃত্তি পাবেন তাদের আমি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড বলবো না। এটা তাদের অধিকার। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক যে বৃত্তি দিচ্ছে এটা কোন দয়া না, এটা তাদের কর্তব্য। এর আগে অ্যালামনাই ছিলো একটা রাজনৈতিক আড্ডাখানা। এটাকে ব্যবহার করে নানা ব্যবসায়ীক ফায়দা হাসিল করা হয়েছে। এসময় অ্যালামনাইয়ের পক্ষ থেকে ঢাবির শিক্ষকদের গবেষণার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা পরিবার। আমরা সেই পরিবারের সদস্য। তার একটা অংশ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। আমরা মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। বৃহৎ পরিসরে এটাকে সম্প্রসারিত করতে চাই। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুস সায়াদাত বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের মদদে একটি বিশেষ বাহিনী এই ব্যাংককে কব্জায় নিয়েছিল। আমাদের এই ব্যাংক এখন এসআলম থেকে দখলমুক্ত হয়েছে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, এই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও পূর্বে দখল করা হয়েছিল। এখন এটি নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের আহ্বানে আমরা সাঁড়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিতে এগিয়ে এসেছি। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থাকতে চাই। ভবিষ্যতেও এই বৃত্তি প্রদান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই অনুষ্ঠানে সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এর আগে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারিনি এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।

তিনি বলেন, এখানে যারা গ্রাম থেকে পড়তে আসে তাদের নিজের খরচ নিজেকে বহন করতে হয়। অনেকেই কোন ব্যবস্থা না করতে পেরে ফিরে চলে যায়। আমাদের সামাজিক দায়িত্ব যদি সবাই ঠিকমতো পালন করতো তাহলে কেউ ফিরে যেত না।

চেয়ারম্যান সাদিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এই অবস্থার মধ্যেও আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি এজন্য কৃতজ্ঞ। এসময় তিনি অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য একটি তহবিল গঠনের জন্য অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতি আহ্বান জানান। এই উদ্যোগ নেয়া হলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অনেক গতি পেয়েছে। তাদের কিছু কাজ ইতোমধ্যে ফলাফল দিয়েছে। আমরা আমাদের সম্ভাবনা হয়তো বিশ ভাগ কাজে লাগাতে পারছি কিন্তু শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, একটা সার্ভে হয়েছে, মোটামুটি একটা হিসাব হয়েছে। তাদের মধ্যে একটা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া। কিছু কিছু অবকাঠামো কাজ করা প্রয়োজন। এরকম চার-পাঁচটা ক্ষেত্রে আসলেই কাজ করা সম্ভব। এসময় তিনি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ধন্যবাদ জানান।

উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ বলেন, সোশাল ইসলামী ব্যাংকের নিজের অবস্থা খুব ভালো না কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি গভীর মমতা দেখিয়েছেন। ব্যাংকের বর্তমান নেতৃত্ব খুব কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়েছেন। তার কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে একটা পর্যায়ে আনার চেষ্টা করছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে এখানে এসেছেন এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।

উপাচার্য বলেন, এদেশের যেখানে যাবেন ঢাবি আছে। এরপরও যদি আমরা তাদের কাজে লাগাতে না পারি তাহলে এটা আমাদের ব্যর্থতা। সম্পদ মোবিলাইজেশন করা সম্ভব। এজন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

অধ্যাপক নিয়াজ বলেন, শুধু সরকারের উপর নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাবে না। আমরা সেভাবে চলতে চাই না। আমরা সরকারি কিন্তু সরকারের না। কাজেই এই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে আমাদের আগাতে হবে।

উপাচার্য বলেন, এই উদ্যোগগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ। আমি চাই এখান থেকে যারা পাশ করে বেরিয়ে গেছেন তারা এখানে আসুক। রাষ্ট্র কোন দেশে সবকিছু ঠিক করে দিতে পারে না।

তিনি বলেন, আমার দিনের আশি ভাগ সময় যাচ্ছে অকাজে। একটা প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক করতে করতে পঁচাশি ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু আশা আছে। এখন একসাথে হচ্ছি। এখন আপনারা আমার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, চায়না সরকারের সহযোগিতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। তুরস্ক সরকারের সাথে কথা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে। ইতোমধ্যে এটা ফাইনাল পর্যায়ে আছে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব আব্দুল বারী ড্যানী। তিনি বলেন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এর আগেও আমাদের সহযোগিতা করেছে। তাদের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকুক। দ্বিতীয় নেয়ার পর আমরা সকল অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তালিকা চেয়েছি। এজন্য বিভিন্ন ব্যাংক ও বীমা আমাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব উদ্যোগের অলামনাই অ্যাসোসিয়েশন যুক্ত থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সদস্য সৈয়দ আমিনুর রহমান মাইকেল। তিনি বলেন, অতীতে অনেকবার এন্ডোমেন্ট ফান্ড গঠনের জন্য কথা হয়েছে কিন্তু কার্যকর হয় নাই। এ জন্য ডুয়ার সদস্যদের এন্ডোমেন্ট ফান্ড কার্যকর করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।

তিনি আরও বলেন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নবগঠিত কমিটি কর্তৃক নেওয়া সকল উদ্যোগ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা অচিরেই এন্ডোমেন্ট ফান্ড গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করবো। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

বিশ্ববিদ্যালয় এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ববিদ্যালয় - এর সব খবর



রে