ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

আদালতপাড়া থেকে জামিনে মুক্ত ২ আসামিকে অপহরণ

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২৬ ১৮:৫৮:৫৬
আদালতপাড়া থেকে জামিনে মুক্ত ২ আসামিকে অপহরণ

ডুয়া ডেস্ক : সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। এবার গাজীপুর মহানগরীর আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসার পর আদালত চত্বরে আসামিদের ওপর হামলা করেছে বাদীপক্ষ। এ সময় নারী-পুরুষসহ ১৩ আসামিকে মারধর করে দুই সহোদর ভাই ও মামলার আসামিকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর আদালতপাড়ায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

আজ বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর জেলা জজকোর্টের পশ্চিম পাশে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

অপহৃত ব্যক্তি হলেন- মো. মিলন মিয়া (৩৫) এবং বাবুল মিয়া (৪০)। তারা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার তেলিহাটি গ্রামের আব্দুল মালেকের সন্তান।

গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অপহরণের নেতৃত্ব প্রদানকারী ব্যক্তি হলেন মামলার বাদী এস. এম. নাজমুল হক। তিনি শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে।

মামলার অপর আসামি এনামুল হক বলেন, “বাদী নাজমুল আমাদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় জমি সংক্রান্ত মামলা করেন। আমরা নারী-পুরুষসহ মামলার ১৩ আসামি আগেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছি। আজ বুধবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ আমাদের স্থায়ী জামিন নেওয়ার দিন ধার্য ছিল। আমরা আদালত থেকে জামিন লাভ করার পর আদালত থেকে বের হয়ে বাদী ও তার সঙ্গে দা, চাকু, ছুড়া, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কতিপয় সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোককে দেখতে পাই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ভীত হয়ে বিষয়টি আমাদের আইনজীবী ও গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে জানাই। তিনি পরে তার সমিতির দুজন ব্যক্তিকে আমাদের আনার জন্য পাঠান। আমরা ওই দুজনের সঙ্গে আদালত থেকে বের হয়ে গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের অফিসের নিচে পৌঁছালে সেখানে উপস্থিত আইনজীবী, পুলিশসহ শত শত মানুষের সামনে বাদী ও তার সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসীরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের ওপর হামলা করে। সন্ত্রাসীরা আমাদের ব্যাপক মারধর করে। এ সময় আমাদের বাঁচাতে সমিতির দুই কর্মকর্তা এগিয়ে এলে তাদেরও আহত করা হয়। পরে ফিল্মি স্টাইলে আমাদের মধ্যে থেকে দুইজনকে টেনেহিঁচড়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়।”

গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আজ সকালে একটি মামলায় ১৩ জন আসামি হাজিরা দেওয়ার জন্য আদালতে আসেন। আসামিরা পূর্বেই আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। আজকে তাদের স্থায়ী (বদলি) জামিন নেওয়ার দিন ধার্য ছিল। বাদী আসামিদের জামিন বাতিলের আবেদন করেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর বিচারক সেলিনা আক্তার আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন।”

তিনি বলেন, “জামিন লাভের পর আসামিরা আদালত থেকে বের হয়ে বাদীপক্ষের লোকজনকে সশস্ত্র অবস্থায় দেখে দেখে ভয় পায়। পরে তারা বিষয়টি আমাকে জানালে আমি আসামিদের নিরাপদে আমার এখানে নিয়ে আসার জন্য আইনজীবী সমিতির দুজন কর্মচারী আইয়ুব আলী ও মতিউর রহমানকে পাঠাই। তাদের নিয়ে আমার অফিসের সামনে নিচে আসার পরে বাদী ও তার সন্ত্রাসী লোকজনের হামলায় ১৩ আসামি ও আমাদের সমিতির দুই কর্মচারী মারাত্মকভাবে আহত হন। তাদের মধ্যে আইয়ুব আলীর মাথায় আঘাত লেগেছে। তার মাথায় সাতটি সেলাই দিতে হয়েছে।”

এ সময় সকলের সামনে বাদীপক্ষ সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে এসে আসামিদের আদালত চত্বরে প্রকাশ্যে ব্যাপকভাবে মারধর করে এবং তাদের দুজনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আদালত চত্বরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলেও জানান তিনি।

আইনজীবীর অভিযোগ, “এ ঘটনার সময়েরই সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, সেখানে পুলিশের দুজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।”

সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে গাজীপুরের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়কে জানানো হয়েছে। আজ আমাদের আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভা। বিষয়টি সেখানেও আলোচনা করা হবে। পরে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

এ বিষয়ে জিএমপির সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, “আদালত চত্বরে হামলায় কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে