ঢাকা, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

‘অনলাইনে ভোট দেবেন’ ৪০ দেশের দেড় কোটি প্রবাসী, ব্যবস্থাপনায় ইসি

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১০:১৮:৪২
‘অনলাইনে ভোট দেবেন’ ৪০ দেশের দেড় কোটি প্রবাসী, ব্যবস্থাপনায় ইসি

ডুয়া ডেস্ক: প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৪০টি দেশে বসবাস করা প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী ভোটারের জন্য ভোটদান ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে ইসি পাঁচটি ভিন্ন ধরনের ভোটিং ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছে এবং অনলাইন ভোটিংকে সবচেয়ে উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করছে।

ইসি কর্মকর্তাদের মতে, নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রবাসীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কমিশন বিদেশের মাটিতে বসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে চাইছে। এ লক্ষ্যে ইসি সচিবালয়কে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ কীভাবে তাদের প্রবাসীদের ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করেছে এবং কোন পদ্ধতি অনুসরণ করেছে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, এস্তোনিয়া ২০২৩ সালে অনলাইন ভোটিংয়ের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। যেখানে ডিজিটাল আইডি ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটার অংশগ্রহণ করেছে। ফ্রান্সে ইন-পারসন (সশরীরে), পোস্টাল ব্যালট (ডাকযোগে) এবং প্রক্সি ভোটিং (অনুমতি সাপেক্ষে) ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির ১১টি আসনে প্রবাসীদের ভোট নেওয়া হয়েছিল, যেখানে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার হার রেকর্ড করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পোস্টাল ও ইলেকট্রনিক ভোটিং (ইভিএম) ব্যবহার করেছে। অস্ট্রেলিয়া ২০২২ সালের যুক্তরাষ্ট্রীয় নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালট ও ইন-পারসন ভোটিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছিল। যেখানে ভোটারদের আগে থেকে নিবন্ধন করতে হয়েছে। ভারতের ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রক্সি ভোট ও ইন-পারসন ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা ছিল। কানাডার যুক্তরাষ্ট্রীয় নির্বাচনে ২০২১ সালে পোস্টাল ও ইলেকট্রনিক ভোটিং এবং জার্মানির ২০২১ সালের নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। সুইজারল্যান্ড ২০২৩ সালের নির্বাচনে পোস্টাল ও ইলেকট্রনিক ভোটিং এবং দক্ষিণ কোরিয়া ২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইন-পারসন ও পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

ইসি এই উদাহরণগুলো থেকে প্রবাসী ভোটারদের জন্য ডাকযোগে ভোটদান, প্রক্সি ভোটদান, দূতাবাস/কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত ভোটদান, ইলেকট্রনিক ভোটদান (অনলাইন বা ইমেল) ও হাইব্রিড সিস্টেমে ভোটদানের বিষয়গুলো বিবেচনা করছে।

পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ও প্রক্সি ভোট - এই তিনটি পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে অনলাইন ভোটিং সিস্টেমকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

ইসি সচিবালয় এই পাঁচ ধরনের ভোট পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করেছে। পোস্টাল ব্যালটে বিলম্ব, নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং প্রক্সি ভোটে আস্থার অভাব একটি সমস্যা। দূতাবাসগুলোতে সরাসরি ভোটদান নিরাপদ হলেও সবার জন্য সহজলভ্য নয়। ইলেকট্রনিক বা অনলাইন ভোটিং দ্রুত হলেও সাইবার নিরাপত্তা একটি উদ্বেগের বিষয়। হাইব্রিড সিস্টেম সহজ হলেও বাস্তবায়ন বেশ জটিল।

প্রবাসীদের ভোটদান ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে ১৫ ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে লজিস্টিক সমস্যা, আইনি বাধা, নিরাপত্তা উদ্বেগ, সচেতনতার অভাব, কর্মীদের ছুটি, আর্থিক ক্ষতি, হোস্ট দেশের অনুমতি, স্থান সংকট, বিশৃঙ্খলা, ব্যালট পেপার বিতরণ, ফলাফল প্রস্তুত, সমন্বয় ও ব্যয়ের মতো বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য। কর্মকর্তাদের মতে, আইনি জটিলতা সবচেয়ে বড় বাধা। কারণ পোস্টাল ব্যালটের জন্য আইন থাকলেও অন্যান্য পদ্ধতির জন্য তা নেই।

ইসির সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক জানিয়েছেন, অনলাইন ভোটিংকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, অনলাইন ভোটের জন্য ভোটারদের আগে নিবন্ধন করতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের পর তারা একটি টোকেন নম্বর পাবেন। এরপর ব্যালট ইস্যু করা হবে এবং সেখানে ভোট দিয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তা জমা দিতে পারবেন।

প্রবাসীদের জন্য ভোটদান ব্যবস্থা চালুর আগে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের মতামত নেওয়া হবে। এরপর তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি পাইলটিং এবং পরে মক ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, অনলাইন ভোটিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং এটি নিয়ে পাইলটিং করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইসি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)-সহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস - এই ৪০টি দেশে বসবাসকারী ১ কোটি ৪০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসীর কথা বিবেচনা করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি ৪০ লক্ষ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন এবং নিউজিল্যান্ডে সবচেয়ে কম ২,৫০০ জন প্রবাসী রয়েছেন।

বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লক্ষ ৫০ হাজার ১৬০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ২১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৯৭ লক্ষ ৪ হাজার ৬৪১ জন এবং হিজড়া ভোটার ৯৩২ জন। চলমান হালনাগাদে আরও ৫০ লক্ষ ভোটার যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে