ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

ঢাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা

২০২৪ ডিসেম্বর ১৪ ১৩:২২:৩৪
ঢাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা

ডুয়া প্রতিবেদক : প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এমনকি করোনা মহামারীর সময়ও তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। তবে এবার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর উদ্ভব পরিস্থিতিতে এই নির্বাচনের কোনো ডামাডোল নেই। নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারেনি বর্তমান কমিটি। শিক্ষকরা বলছেন, ডিসেম্বরে তো নয়, এবারের নির্বাচন নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ২০২৪ সালের কার্যকর পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ভোট বর্জন করায় সেবার নির্বাচনে বিনা ভোটে সব পদে জিতেছিল আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। তাছাড়া নীল দলের বাইরে অন্য কোনো প্যানেল বা প্রার্থী ছিল না সেই নির্বাচনে। সেবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা। শুধু তাই নয় গত ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সব কটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা।

নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষক সমিতির বর্তমান কমিটিই নির্বাচন আয়োজন করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র অধ্যাপককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেন তারা। তিনিই পরবর্তী আয়োজন সম্পন্ন করেন। তবে এবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা পালন করায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা বয়কট করেছে বর্তমান শিক্ষক সমিতির কমিটিকে। নেতৃত্বে থাকা প্রায় সব শিক্ষকই শ্রেণী কক্ষেও শিক্ষার্থীদের বয়কটের শিকার হোন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকরাও বলছেন বর্তমান কমিটির কোনো এখতিয়ার নেই নির্বাচন আয়োজনের। তারা বর্তমান কমিটিকে অবৈধ বলেও মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ইস্যুতে সম্প্রতি সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও তারা কোনো সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারেননি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কিনা- সে বিষয়ে সভায় সংশয় প্রকাশ করা হয়। সভায় উপস্থিত সমিতির একজন সদস্য বলেন, সভায় নির্বাচন ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ, নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নানান ইস্যু এসেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এভাবে নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন বলে মত দিয়েছেন সবাই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষদের সংগঠন সাদা দলের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অন্যদিকে একই ইস্যুতে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। সভায় এই মূহুর্তে কোনো ধরনের নির্বাচনের পক্ষে মত দেয়নি কোনো শিক্ষক। তারা বলছেন, বর্তমান কমিটির নির্বাচন আয়োজনের কোনো এখতিয়ার নেই। তারা নিজেরাই অনির্বাচিত। এই মূহুর্তে দেশের শিক্ষাসহ নানান সংকটে ভূমিকা রাখাকেই মূখ্য বলে মন করছেন সাদা দলের শিক্ষকরা। জাতীয় নির্বাচনের আগে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন চান না তারা।

সাদা দলের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন করায় বর্তমান শিক্ষক সমিতির কমিটিকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বয়কট করেছি। তারা গত নির্বাচনে ভোট ছাড়াই জয় লাভ করছিল এবং সরাসরি শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের কোনো কর্মকাণ্ড করার অধিকার নেই, তারা করছেও না। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও তারা এক ধরনের বয়কটের মুখেই আছে। এই মূহুর্তে নির্বাচন আয়োজনে তাদের কোনো এখতিয়ার নেই। বর্তমান দেশের সংকটকালীন মূহুর্তে নির্বাচন আয়োজনের পরিস্থিতি বা সুযোগ কোনোটায় নাই বলে আমরা মনে করি। তাই আমরা নির্বাচন করব না এবং শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিতও হবে না। বরং দেশের শিক্ষাসহ নানান সংকটগুলোতে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করছি। সে ধারা আমরা অব্যহত রাখতে চাই।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এখনো নির্বাচনের তারিখ ঠিক হয়নি। আমরা দু-এক দিনের মধ্যেই সবার সঙ্গে বসব। বসে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনদিয়েদেব।’

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

বিশ্ববিদ্যালয় এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ববিদ্যালয় - এর সব খবর



রে