ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

স্থগিত ডিসির নতুন ফিটলিস্ট, প্রশাসনে বাড়ছে অসন্তোষ

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৩ ১০:৪৫:০৭
স্থগিত ডিসির নতুন ফিটলিস্ট, প্রশাসনে বাড়ছে অসন্তোষ

ডুয়া ডেস্ক : দীর্ঘদিন ধরে দেশের নয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদ শূন্য রয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব এবং উপসচিব পদে পদোন্নতিও আটকে আছে। একাধিক বৈঠকের পর সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা স্থগিত রাখা হয়েছে। নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগের জন্য ফিটলিস্ট তৈরির কাজ শুরু হলেও সেটিও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এসব কারণে বিভিন্ন ব্যাচের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।

এছাড়া, মহার্ঘভাতা সংক্রান্ত কমিটি গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর হঠাৎ তা থেকে সরে আসায় কর্মচারীদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে কোনো সচিব নেই। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবরা রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী, সচিবরা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উপদেষ্টা, মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সচিবই মন্ত্রণালয়ের অভিভাবকের ভূমিকা রাখেন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে এসব গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশ্বস্ত ও যোগ্য কর্মকর্তা না পাওয়ার কারণেই সচিব নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সচিব পদে পদোন্নতি দিতে গিয়ে সরকার বারবার হোঁচট খাচ্ছে। তারা সবাইকে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে ভাবছে। বর্তমান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং বিগত সরকারের সময়ে পদোন্নতিসহ নানাভাবে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার কর্মকর্তাদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে কালক্ষেপণ করছেন নীতিনির্ধারকরা। এতে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কর্মরত কর্মকর্তাদের রসায়নটা ভালো যাচ্ছে না।

তারা জানান, সরকারের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলরা প্রশাসনে কর্মরতদের সন্দেহের চোখে দেখছেন। স্বৈরাচার সরকারের সময়ে যারা অপেক্ষাকৃত দলনিরপেক্ষ ছিলেন, তাদের বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ফ্যাসিবাদের সময় চাকরি করেননি রাতারাতি এমন কর্মকর্তা তৈরি করা যাবে না। যারা আছেন তাদের ভেতর থেকেই বেছে নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচকে মূল ধরে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য তথ্য চেয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পত্র দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নোটিশ জারির পর থেকে প্রায় এক বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি এসএসবি। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩০তম ব্যাচকে মূল বিবেচনায় নিয়ে গত বছর ৭ জুলাই সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতির নোটিশ জারি হয়। এ পদোন্নতি ঝুলে আছে এসএসবিতে।

ইতোমধ্যে গত বছর নভেম্বর মাসে প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচকে মূল বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য নোটিশ করা হলেও এসএসবি শেষ হয়নি। এসব বিষয়ে উল্লিখিত ব্যাচের কর্মকর্তাদের ভেতরে হতাশা বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিসির ফিটলিস্ট তৈরির কাজে শুরুর পর মাত্র এক দিন ভাইভা নিয়ে তা স্থগিত করা হয়েছে। কেন স্থগিত রয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে ডিসির ফিটলিস্ট তৈরির কাজে হাত দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এবারের ফিটলিস্টে ভাইভা দেওয়ার জন্য বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫, ২৭ এবং ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডাকা হয়েছে। তিন ব্যাচে প্রায় ৬ শতাধিক কর্মকর্তা আছেন তাদের মধ্যে ৪০ জনের ভাইভা নেওয়া হয়েছে। বাকিরা অপেক্ষায় আছেন।

এছাড়া মহার্ঘভাতার হার নির্ধারণে অর্থ সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছিল সরকার, যেখানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিটি গঠনের পরদিনই জনপ্রশাসন সচিব সংবাদ সম্মেলনে মহার্ঘভাতা প্রদানের ঘোষণা দেন।

তিনি জানান, শুধু বর্তমান কর্মচারীরাই নয়, এবার অবসরে যাওয়া কর্মচারীরাও এই ভাতা পাবেন। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকারের কাছে মহার্ঘভাতা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই। সরকারের এমন নীতিগত পরিবর্তনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি কর্মচারীরা।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে