ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

৫ বছর পর ফের ডাকসু নির্বাচনের সম্ভাবনা

২০২৪ ডিসেম্বর ১২ ১২:৪৭:৫৩
৫ বছর পর ফের ডাকসু নির্বাচনের সম্ভাবনা

ঢাবি প্রতিনিধি : দীর্ঘ ৫ বছরের অচলাবস্থার পর অবশেষে আবারও খুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দুয়ার। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতিমধ্যে কাজ করছে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলও। শুরু হচ্ছে বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলোচনা। শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোও এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে ঐক্যে পোঁছেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।

দীর্ঘ ২৮ বছর অচল থাকার পর ২০১৯ সালের মার্চে নির্বাচনের মাধ্যমে সচল হয় ডাকসু। এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের মার্চে। এরপর করোনা এবং প্রশাসনের অনীহার কারণে ৪ বছর ধরে বন্ধ ছিল ডাকসুর দুয়ার। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা দাবি জানালেও কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই দাবি উঠেছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের। গত চার মাসে শিক্ষার্থী ও ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ দাবি জানিয়েছে। এনিয়ে ক্যাম্পাসে কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে গ্রিন সিগনাল জানানো হয়েছে।

গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করার কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন আমাদের জন্য খুবই জরুরি। কারণ শিক্ষার্থীদের মতামত আমাদের জানতে বেশ বেগ পেতে হয়। ডাকসু নির্বাচন হলে এই প্রক্রিয়াটি আমাদের জন্য আরো সহজ হবে।’

প্রক্টর এ-ও বলেন, ‘তবে এখানে বেশ কিছু সমস্যা আছে। ডাকসুর রিফরমেশনের প্রয়োজন আছে। গঠনতন্ত্র নিয়ে বেশ কিছু আপত্তি জানিয়েছে ছাত্রসংগঠনগুলো।

এদিকে আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ঐক্যে পৌঁছেছে ছাত্রসংগঠনগুলো। ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভায় এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে তারা।

এর আগে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় নির্বাচন বা অন্য যেকোনো নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ছাত্রদের তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমাদের সর্বপ্রথম কর্তব্য। আমি মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে, জাতীয় বা অন্য যেকোনো নির্বাচনের আগে।

স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহবায়ক জামালুদ্দীন মোহাম্মদ খালিদ বলেন, এই মুহূর্তে ক্যাম্পাসের যে পরিস্থিতি, সে বিবেচনায় ডাকসু নির্বাচন অপরিহার্য হয়ে আছে।‌ ছাত্রলীগের হাত থেকে ক্যাম্পাস মুক্ত করার পর সবচেয়ে জরুরি ছিলো দ্রুত ডাকসু নির্বাচন সেরে ফেলা। কারণ ছাত্রদের কোনো নির্বাচিত অথরিটিজ নেই। ফলে নানান পক্ষ ছাত্রদের অথরিটির দখল নিতে মরিয়া হয়ে আছে। এতে এক ধরণের আধিপত্য বিস্তার জনিত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।‌ অন্যদিকে প্রশাসনের সাথে ছাত্রদের বিষয়গুলো ডিল করার জন্যও নির্দিষ্ট কোনো প্রতিনিধি নেই। ফলে ফ্যাসিবাদ পরবর্তী প্রশাসনের সাথে ছাত্রদের যে কমিউনিকেশন ও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা ছিলো এবং পজেটিভ পরিবর্তন বা সংস্কার হওয়ার কথা ছিলো, সেগুলোও ঠিকঠাক হচ্ছে না।

তিনি বলেন, সবদিক বিবেচনায় ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনই ঘোষণা করতে হবে বলে দাবি করছি আমরা। পাশাপাশি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত বা গঠনতান্ত্রিক সংস্কার দরকার বলেও মনে করি। সেগুলো আমরা পরবর্তী মিটিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশাসনের কাছে তুলে ধরব। আপাতত বলতে চাই যে, হল সংসদ ও কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচন আলাদা দুই দিনে করা দরকার। নির্বাচন খোলা মাঠে অর্থাৎ সেন্ট্রাল ফিল্ডে আয়োজন করার দাবিও করছি।

ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিষয়ে একটা কমিটি করে দিয়েছি। সে কমিটিকে ছাত্র সংসদকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে বসেছেন এবং বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ শুরু করবেন। কমিটির পরামর্শ এবং অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে আমরা ডাকসুর তারিখ এবং আনুষাঙ্গিক সবকিছুনির্ধারণকরব।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

বিশ্ববিদ্যালয় এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ববিদ্যালয় - এর সব খবর



রে