ঢাকা, বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১

বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে বছরে এক লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু

২০২৫ জানুয়ারি ১৮ ১৮:৩৩:১৮
বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে বছরে এক লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু

ডুয়া নিউজ: বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫ হাজার ২৫৮ শিশু সহ মোট ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। এই দূষণের ফলে মানুষ হার্টের রোগ, স্ট্রোক, হাঁপানি এবং ফুসফুস ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত 'বাংলাদেশে সূক্ষ্মকণা বায়ু দূষণে জনস্বাস্থ্য প্রভাব' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ পায়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর অ্যাটমসফেরিক এয়ার পলিউশন (ক্যাপস) ও সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ)।

সিআরইএ- এর গবেষণায় জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দূষিত দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে, যেখানে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫ এর বার্ষিক মান ৭৯.৯ মাইক্রোগ্রাম, যা জাতীয় মানদণ্ড ৩৫ মাইক্রোগ্রামের দ্বিগুণ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড ৫ মাইক্রোগ্রামের ১৫ গুণ বেশি। এই রকম দূষণের ফলে জনস্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব পড়ছে, বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এদিকে, ২০২২ সালে সরকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধুলিকণার মান ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে ৩৫ মাইক্রোগ্রামে বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

সিআরইএ- এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের জাতীয় বায়ুমানের মান (৩৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) পূরণ করা গেলে মৃত্যুহার ১৯ শতাংশ হ্রাস, আয়ুষ্কাল (ওয়াইএলএল) ২১ শতাংশ এবং অক্ষমতার সঙ্গে বসবাসের বছর (ওয়াইএলডি) ১২ শতাংশ কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া, যদি ডব্লিউএইচও-এর ২০২১ সালের কঠোর নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিটি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম বায়ু মান অর্জন করা যায়, তাহলে মৃত্যুহার ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে, যা প্রতি বছর ৮১ হাজার ২৮২ মানুষের জীবন রক্ষা করবে।

সংবাদ সম্মেলনে সিআরইএ-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্লেষক ড্যানিয়েল নেসান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের বর্তমান বায়ুমান এবং ২০০৫ ও ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও’র নির্দেশিকা তুলনা করে দেখা গেছে, পিএম ২.৫ স্তরের সামান্য উন্নতি জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সুবিধা এনে দিতে পারে। তিনি সাফ জানান যে, কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গ্রহণের মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব।

ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণের বর্তমান অবস্থা শুধু শরীরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি উল্লেখ করেন, দূষণ পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিরোধের কার্যকর পদক্ষেপ এখনই গ্রহণ না করলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

সুইডিশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন) মিসেস নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম বলেন, বায়ুদূষণ বাংলাদেশের প্রধান শহরের জন্য একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবেলায় অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন।

অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস জানান, পিএম ২.৫ জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি এবং সরকার এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করছে।

বিষয়টি আরো গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর ল' অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সেক্রেটারি সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন সহ অন্যান্য প্রখ্যাত বক্তাগন বক্তব্য রাখেন।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে