ঢাকা, বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১

আচল ফাউন্ডেশন

২০২৪ সালে দেশব্যাপী ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২৫ জানুয়ারি ১৮ ১৬:৩৫:০২
২০২৪ সালে দেশব্যাপী ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ডুয়া নিউজ: ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, যার মধ্যে ৪৬.১ শতাংশই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। এরপরই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। এ হার ১৯.৪ শতাংশ। আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের বিষয় ছিল, ‘২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।’

ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সায়্যেদুল ইসলাম সায়েদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দীন, আইনজীবী ও লেখক ব্যারিস্টার নওফল জামির এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৪ সালের আত্মহত্যার তথ্য পূর্ববর্তী বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৩২ জন, ২০২৩ সালে ৫১৩ জন এবং ২০২৪ সালে ৩১০ জন। এদের মধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যা সম্পর্কিত রিপোর্ট মিডিয়ায় কম আসার সম্ভাবনা রয়েছে, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বয়সভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৩-১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি, যা ৬৫.৭ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ২০-২৫ বছর বয়সী যুবক-যুবতীরা, যাদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ২৪ শতাংশ। শিশুদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা গেছে, ১-১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ৭.৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম আত্মহত্যা ঘটেছে ২৬-৩০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে, যা মাত্র ২.৯ শতাংশ।

২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যার প্রবণতা সব লিঙ্গের মধ্যে দেখা গেছে, তবে নারীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি। মোট ৩১০ জন আত্মহত্যাকারীর মধ্যে ৬১ শতাংশ নারী এবং ৩৮.৪ শতাংশ পুরুষ। তৃতীয় লিঙ্গের এবং ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে একজন করে আত্মহত্যা করেছেন, যা মোট সংখ্যার ০.৩ শতাংশ করে।

এতে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার উচ্চ প্রবণতা এবং এর সম্ভাব্য সামাজিক ও মানসিক কারণগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। নারীরা সাধারণত আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, তাই তাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি আরও জানায়, ২০২৪ সালে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৪৬.১ শতাংশ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। এরপরই রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা, যাদের আত্মহত্যার হার ১৯.৪ শতাংশ। স্নাতক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে, ২০২৪ সালে এ হার ১৪.৬ শতাংশ। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের ৭.৪ শতাংশ শিক্ষার্থীও আত্মহত্যা করেছেন। স্নাতকোত্তর, ডিপ্লোমা এবং সদ্য পড়াশোনা শেষ করে বেকার থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ১.৯%, ০.৬%, এবং ০.৬% যথাক্রমে।

আত্মহত্যার পদ্ধতি হিসেবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা সবচেয়ে বেশি, যা ৮৩.৫% আত্মহত্যার ক্ষেত্রে ঘটেছে। বিষপানে আত্মহত্যার হার ৮.৭%, এবং অন্যান্য পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করেছেন ৪.৬% মানুষ, যেমন ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া, ট্রেনে কাটা পড়া, পানিতে ডুব দেওয়া, ছুরি দিয়ে আঘাত করা, ঘুমের ওষুধ খাওয়া ইত্যাদি।

এই তথ্য প্রকাশের পর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে পরিবারের সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত, বিশেষত দড়ি, বিষ, ছুরি ইত্যাদি ব্যবহারের দিকে। শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা ও মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। পারিবারিক অবহেলা, প্রিয়জনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি কিংবা শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছ থেকে সমর্থন না পাওয়া এসব বিষয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভিমান তৈরি করতে পারে, যা একসময় আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে। ২০২৪ সালে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৮.৪% অভিমানের কারণে আত্মহত্যা করেছেন, এর মধ্যে ৫৬.৫% প্রাথমিক স্কুল শিক্ষার্থী, ৩১.৯% মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষার্থী, এবং ১৫.৩% উচ্চতর শিক্ষার শিক্ষার্থী।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে