ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১

মহাশূন্যে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে চীন!

২০২৫ জানুয়ারি ১২ ১৭:৩৪:১৪
মহাশূন্যে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে চীন!

ডুয়া ডেস্ক: বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নিচ্ছে এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ চীন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড়বাঁধ নির্মাণ করে হাজার হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে দেশটি। এবার মহাশূন্যে একটি বাঁধ বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার মাধ্যমে বেইজিং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জোগান নিশ্চিত করতে চায়। চীনা সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ সম্প্রতি এই প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে, যা মহাকাশ গবেষকদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ এবং কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাশূন্যে বাঁধ তৈরির নীল নকশা এঁকেছেন ড্রাগনল্যান্ডের বিখ্যাত রকেট বিজ্ঞানী লং লেহাও। এই প্রকল্পের পোশাকি নাম ‘থ্রি গর্জেস ড্যাম প্রজেক্ট অন আর্থ’। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর জিওস্টেশনারি কক্ষপথে এক কিলোমিটার প্রশস্ত সৌর প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা করছেন চীনা মহাকাশ গবেষকরা।

মহাশূন্যে সৌর প্যানেল বসানোর কাজ শেষ হলে সেগুলো দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে ড্রাগন। চীনা গবেষকদের দাবি, দিন-রাতের চক্র, আবহাওয়া বা ঋতু পরিবর্তনের জেরে এই সৌর প্যানেলের কোনও ক্ষতি হবে না। সব সময় সেখান থেকে পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ।

চীনা মহাকাশ গবেষক লং বিদ্যুৎ তৈরির এই নিরবচ্ছিন্ন প্রকল্পকে ‘থ্রি গর্জেস ড্যাম’ বা তিন গিরিখাত বাঁধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বর্তমানে ড্রাগনল্যান্ডের ইয়াংজি নদীর উপর রয়েছে ওই বাঁধ। সেখান থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বেইজিং।

এদিকে, আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, চীনের এই তিন গিরিখাত বাঁধ এতটাই বড় যে, সেটি পৃথিবীর ঘূর্ণন ০.৬ মাইক্রসেকেন্ড কমিয়ে দিয়েছে। তাই এই ধরনের প্রকল্পকে মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা।

চীনা গবেষক লং বলেছেন, “আমরা এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিয়েছি। ভূপৃষ্ঠের ২২ হাজার ৩৭০ মাইল উপরে জিওস্টেশনারি কক্ষপক্ষে ওই তিন গিরিখাত বাঁধ মতোই সৌর প্যানেল বসানো হবে। সেখান থেকে আমরা যে সৌরশক্তি পাব তা এক বছরে উত্তোলন করা অপরিশোধিত তেলের সমান হবে। এটা একটা অবিশ্বাস্য প্রকল্প। আমরা এখন শুধুই সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।”

এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রকেটের প্রয়োজন। জানা গেছে, বর্তমানে এই বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন চীনা মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। পুনর্ব্যবহারযোগ্য ভারী বস্তু বহনে সক্ষম রকেট নির্মাণের চেষ্টা হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন গবেষক লং। তবে বেইজিং এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি।

প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের জন্য দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রকেটের প্রয়োজন হবে। তাদের মধ্যে একটি হল ‘সিজেড-৫’ এবং অন্যটি ‘সিজেড-৯’, যা ১১০ মিটার উঁচু এবং ১৫০ টন পর্যন্ত মালবাহী সক্ষম।

বিশ্বে সৌরশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মহাশূন্যকে এক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে, এবং চীনের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এটি নতুন এক দিগন্ত খুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। গবেষকদের মতে, মহাশূন্যে সৌরশক্তির এই ব্যবহার বিশ্বে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে একটি কার্যকরী বিকল্প হতে পারে।

চীনা মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে ইতোমধ্যেই সচেষ্ট হয়ে উঠেছেন এবং সফল হলে এটি তাদের মহাকাশ গবেষণার জন্য নতুন একটি অধ্যায় খুলতে পারে। চীন ইতোমধ্যেই মহাশূন্যে তাদের নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন স্থাপন করেছে এবং যদি তারা এই সৌর প্যানেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, তবে তা আন্তর্জাতিক মহাকাশ প্রতিযোগিতায় তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া, গ্লোবাল কনস্ট্রাকশন রিভিউ

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে