ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

এমপিওভুক্তির নামে জালিয়াতি, কোটি টাকার লেনদেন

২০২৫ জানুয়ারি ১১ ১৭:৪১:১৩
এমপিওভুক্তির নামে জালিয়াতি, কোটি টাকার লেনদেন

ডুয়া ডেস্ক : বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ভুয়া চিঠি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক প্রতারক চক্র। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ এমন একটি চক্রকে ধরেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই চক্রের সাথে মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং পিয়নের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

এমন জালিয়াতির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে মন্ত্রণালয়। তাৎক্ষণিক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। চার সদস্যের কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই চিঠি ওয়েবসাইটে কীভাবে প্রকাশ হলো, তা উদঘাটন এবং এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কেউ জড়িত কি না তা বের করতে কমিটিকে বলা হয়।

সূত্র জানায়, ডিসেম্বর মাসের ২৬ তারিখ কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ থেকে ১২টি কারিগরি ও মাদ্রাসাকে নতুন এমপিওভুক্ত করে একটি ভুয়া চিঠি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। চিঠিটি এমন একদিন প্রকাশ করা হয়, যার আগের দিন সচিবালয়ে আগুন লাগে এবং ওই দিন বিদ্যুৎ ছিল না।

ওই দিন বেশিরভাগ কর্মকর্তা নিরাপত্তার কারণে সচিবালয়ে আসেননি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চক্রটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ভুয়া চিঠি আপলোড করে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এই চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে চিহ্নিত করেছে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার জন্য ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে চুক্তি হয়েছিল। এর মধ্যে চিঠি আপলোডের সময় অর্ধেক, বাকি টাকা এমপিও হওয়ার পর নেওয়ার চুক্তি ছিল। এই প্রজেক্ট সফল হলে আরও ১২টি মাদ্রাসার চিঠি প্রস্তুত ছিল।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সচিবালয়ে একটি ভবনে আগুন লাগে। পরদিন ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ে বিদ্যুৎ ছিল না, কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকারও সীমিত করা হয়। স্বাভাবিক কোনো কাজকর্ম সেদিন হয়নি। ঠিক ওই দিনই এমপিওভুক্তকরণের ভুয়া সেই চিঠি অনলাইনে আপলোড করে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের আইটি সেল।

সূত্র জানায়, চিঠিটি আপলোড করে কম্পিউটার অপারেটর শাহিন। ২৬ তারিখ তার টেবিলে চিঠিটি পড়েছিল। সচিবালয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় চিঠিটি বাইরে থেকে আপলোড করা হয়।

গণমাধ্যমকে শাহিন বলেন, ঘটনাটি ভুলবশত হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে চিঠিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাইরে নিয়ে আপলোড করেছি।

ভুয়া ওই চিঠিতে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার তেথুলিয়া পীরগাছা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজ ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার দ্বীপনগর মহিলা টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজ, পবা উপজেলার পীয়ারলেস বিএম কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবপুরের সোনামসজিদ মাধ্যমিক কারিগরি ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, ভোলাহাটের ঝোউবোনা কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, গোমস্তাপুরের রহনপুর কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, নাচোল উপজেলার নাচোল কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ, নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার নুরুল্যাবাদ জোতপাড়া বি এম কলেজ, নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর কৃষি ও কারিগরি কলেজ, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার ইচ্ছামতি ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা অ্যান্ড ভোকেশনাল এবং গাইবান্ধার আব্দুল কদ্দুস সরকার কৃষি কলেজ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাম উল্লেখ রয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত, স্কুল-কলেজ অনুমোদন, বদলিসহ নানা বাণিজ্যের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পিয়নরা জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সুবাদে তারা শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে