ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

গ্রিন লাইন পরিবহণের বিরুদ্ধে প্রবাসির সাথে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ

২০২৫ জানুয়ারি ০৪ ১৪:৩১:৪৪
গ্রিন লাইন পরিবহণের বিরুদ্ধে প্রবাসির সাথে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ

ডুয়া নিউজ : একই টিকিট একাধিক যাত্রীর কাছে বিক্রি এবং কর্মচারিদের চরম অপেশাদার ও অপ্রত্যাশিত আচরণের অভিযোগ করা হয়েছে দেশের প্রথম সারির পরিবহন গ্রিণ লাইনের বিরুদ্ধে। কাতার প্রবাসি এবং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে কর্মরত সিলেটের শাকিল আহমেদ এ অভিযোগ করেন।

জানা যায়, গত ২৩ ডিসেম্বর কাতার থেকে আবুধাবি হয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন সিলেটের শাকিল আহমেদ। বিমানবন্দর থেকে বের হতে রাত সাড়ে ৮টা বেজে যায়। তখন সিলেটের কোনো ফ্লাইটও ছিল না। বাধ্যহয়ে অনলাইনে গ্রিন লাইন পরিবহনের ঢাকা থেকে সিলেট টিকিট কাটেন তিনি। মোবাইলে এসএমসের মাধ্যমে টিকিট কনফার্ম হয়ে সোজা চলে যানে রাজারবাগ কাউন্টারে। নির্দিষ্ট সময়েরও দেড় ঘণ্টা পর ছাড়ে বাস। বাসটি আরামবাগ কাউন্টারে যাওয়ার পর এক যাত্রী এসে দাবি করেন যে সিট তার। এসময় বাসের সুপাভাইজারও ওই যাত্রীর পক্ষ নিয়ে মধ্যরাতে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন।

এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তাহীনতা ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরে শাকিল আহমদ বলেন, ‘দেশের প্রথম সারির একটি পরিবহন কোম্পানির এমন আচরণ চরম অপেশাদার ও অপ্রত্যাশিত। শুধু তাই নয়, একই সিটের টিকিট একাধিক যাত্রীর কাছে বিক্রি করা কীভাবে সম্ভব হয়?’ এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে তিনি একটি অভিযোগও জানিয়েছেন।

এদিকে ভুক্তভোগী যাত্রীর সঙ্গে এমন আচরণের কথা স্বীকার করেছে গ্রিন লাইন পরিবহন। বিষয়টি নিয়ে ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করা সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, গ্রিন লাইন পরিবহনের মতো নামিদামি বাস কোম্পানির কাছ থেকে এমন ঘটনা প্রত্যাশিত না। অবশ্যই তাদের শাস্তি আওতায় আনা উচিত।

অন্যদিকে সরকারিভাবে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী সংস্থা জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং সেই আলোকে সমাধান দেওয়া হবে।

ভুক্তভোগী শাকিল আহমদ ভোক্তা অধিকারের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে এয়ার আরাবিয়ার ফ্লাইটে দোহা থেকে আবুধাবি হয়ে আমি ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাই। সময় তখন রাত সাড়ে ৮টার পর হওয়ায় ঢাকা থেকে সিলেটগামী আর কোনো ফ্লাইট না থাকায় আমি অনলাইনে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের টিকিট কিনি, যেটির বুকিং নম্বর (20241223034120874799)। তারপর যথাসময়ে আমি রাজারবাগে গ্রিন লাইনের বাস বোর্ডিং পয়েন্টে উপস্থিত হই। কিন্তু প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে বাস আসে। তারপর আমার মোবাইলে পাওয়া বুকিং মেসেজ দেখানোর পর আমাকে বাসে উঠতে দেওয়া হয়। কিন্তু আরামবাগ যাওয়ার পরপরই আমার সিটে (H-2) আরেকজন যাত্রী চলে আসেন এবং আমাকে গ্রিন লাইনের ওই বাসের সুপারভাইজার জানান, আমার টিকিট আগামীকালকের, তাই আমাকে নেমে যেতে হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ঢাকায় তখন রাত আড়াইটা। আমার সঙ্গে দুটো লাগেজ, যেগুলোতে বিদেশ থেকে কেনা স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল। কিন্তু আমার কোনো অনুরোধ না রেখে আমাকে একরকম জোরপূর্বক রাস্তায় নামিয়ে দেন বাসটির সুপারভাইজার। অচেনা ঢাকায় মধ্যরাতে এই অবস্থায় আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে যাই। পরে উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে উবারে আবার ঢাকা বিমানবন্দরে চলে আসি। এরপর সাড়ে ১১ হাজার টাকা দিয়ে আমি সকাল ৭টা ১০ মিনিটের একটি ফ্লাইটে সিলেটে পৌঁছাই।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রবাসী শাকিল বলেন, গ্রিন লাইনের এমন হয়রানির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছি। বর্তমান সরকার যেখানে বিমানবন্দরসহ সব জায়গায় প্রবাসীদের সম্মান ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে নানারকম পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে গ্রিন লাইনের মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়ার নয়। সেই রাতে আমি যে কোনো সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার প্রবল আশঙ্কা নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত পার করেছি। আমি চাই না আর কোনো প্রবাসী এ ধরনের অন্যায় আচরণের শিকার হোক।

তিনি আরও বলেন, তারা এসএমএসে বলেছে কাউন্টারে আসার সময় ইমেইলে আসা টিকিটের প্রিন্ট কপি নিয়ে আসতে হবে। আমি যদি অনলাইনে টিকিট কেটে থাকি তাহলে আমাকে আবার কেন দোকান থেকে প্রিন্ট করে তাদের দেখাতে হবে। আমার কাছে তো এসএমএস এবং ইমেইলে আসা টিকিটের কপি আছেই। এটাও তাদের দেওয়া এক ধরনের ভোগান্তি।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খানের অফিসিয়াল মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, যদি কেউ প্রতারণা করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে তার প্রতিকার পাওয়ার জায়গা আছে। সরকারিভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করা যায়। আমরা সেই অভিযোগগুলো দেখি এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আইনানুগ যে ব্যবস্থা, সেটি দেওয়া হয়। তার অভিযোগের বিষয়টি আমরা দেখবো এবং সেই আলোকে সমাধান দেব।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে